সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা: বিশ্ব প্রাণ বৈচিত্র দিবস, ২০১২

রোকেয়া বেগম || Saturday 26 May 2012

সামুদ্রিক সম্পদ সম্পর্কে আমাদের অসচেতনতা রয়েছে। একে রক্ষা জরুরী। দুই হাজার বারো সালের পরিবেশ দিবসে এটাই ছিল প্রধান বিষয়।

২২ মে, ২০১২ বিশ্ব প্রাণবেচিত্র্য দিবস। বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে বীজবিস্তার ফাউনডেশান ও নয়াকৃষি আন্দোলন যৌথভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানব বন্ধনের অয়োজন করে। বিকেল ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত এই মানব বন্ধ চলে। মানব বন্ধনে উপস্থিত সদস্য ছিলেন প্রায় ১০০ জন। এই দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল।“সমুদ্রের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।” মানব বন্ধনটি পরিচালনা করেন বীজবিস্তার ফাউনডেশানের সদস্য সীমা দাস সীমু। সীমা দাস সীমু বলেন, এই পৃথিবীতে সকলের বাঁচার অধিকার রয়েছে। সকল প্রাণীকে বাঁচার জন্য এই পৃথিবীকে দুধষমুক্ত রাখতে হবে। সমুদ্রে মাছসহ ৬০০ শত এর ও বেশি জলজ প্রাণী রয়েছে। নানা কারণে এই জলজ প্রাণী সমুদ্র থেকে নিশ্বেস হয়ে যাচ্ছে। এই জলজ প্রাণী আমাদেরকে টিকিয়ে রাখতে হলে সমুদ্রকে দুষণ মুক্ত রাখতে হবে। এখন বর্ষাকাল বর্ষাকালে কোন বৃষ্টি নাই। এর জন্য দায়ী কারা ? এই মানব বন্ধনে বাংলাদেশের ৪০ টি জেলার নারী ও প্রাণবৈচিত্র্য নেটওয়ার্কের নারী সদস্যরা সংহতি প্রকাশ করতে এসেছেন। মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন কাওসার পারভীন নির্বাহী পরিচালক বরিশাল মহিলা কল্যাণ সংস্থা। মির্জা তাহমিনা আক্তার, সমন্বক নাইস ফাউ-েশান। শাহানা বেগম, নির্বাহী পরিচালক কর্মনীড় সামাজিক মহিলা উন্নয়ন সংস্থা। বিলকিস জাহান, নির্বাহী পরিচালক, আঙ্গিনা মহিলা সমিতি। মরিয়ম মান্নান, সভানেত্রী চুপড়িয়া মহিলা সংস্থা। শাহীনুর বেগম, নয়াকৃষি আন্দোলন। বীজবিস্তার ফাউনডেশান এর সদস্য রোকেয়া বেগম প্রমুখ ।

কাউসার পারভীনঃ বরিশাল এলাকায় জলোচ্ছাসের কারনে সকল প্রাণ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জলোচ্ছাসের পর অনেক গরীব মানুষ তাদের জীবন জীবিকা হারিয়ে পথে বসে যায়। সরকার এদের পূর্ণবাসনের কোন ব্যবস্থা করে না। এখনও অনেক হত দরিদ্র পরিবার অসহায় অবস্থায় রয়েছে। এই হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে অবশ্যই পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।

মির্জা তাহমিনা আক্তারঃ প্রতিবছর আমরা বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য দিবস পালন করে থাকি। অসাধু ব্যক্তিদের কারণে সুন্দর বনের প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর বন থেকে যারা আগে মধু সংগ্রহ করতো তারা মধু সংগ্রহের সময় মধুর চাক কিছুটা রেখে আসতো যাতে পরবর্তীতে আবার মধু পেতে পারে। সুন্দর বনের হরিণ মেরে ফেলছে। বাঘ এখন লোকায়লে চলে আসছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, এখন হুমকীর মুখে। সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা অতি জরুরী।

শাহানা বেগমঃ কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। সেই সমুদ্র সৈকতকে প্রভাবশালীরা ধ্বংস করে ফেলছে। এই প্যারা বন থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন -জীবিকার একটি পথ। প্যারাবন মানুষকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে। চকরিয়া প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি চাষ করে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সেখানে কোন পশু পাখি নেই। আগে হাজার হাজার পশু পাখি এই প্যারাবনে বসবাস করতো এবং তাদের খাবার সংগ্রহ করতো। মহিষ, ভেড়া তাদের খাবার তারা এই বন থেকে খেত সকালে ছেড়ে দিয়ে আসলে বিকেলে নিজে নিজে বাড়ি ফিরে আসতো। এই প্যারাবনকে প্রভাবশালীরা ধ্বংস করে ফেলেছে। উপকূলীয় এলাকার পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি প্যারাবনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।

রোকেয়া বেগমঃ প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা না করতে পারলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমরা রক্ষা করতে পারবো না। তামাক চাষ করে মাটি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। মাটির জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য

প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষি ওপর জোর দিতে হবে। সমুদ্রের পানিতে ৬০০ ধরনের জলজ প্রাণী রয়েছে। এদের রক্ষা করতে হলে সমুদ্রকে দুষন মুক্ত রাখতে হবে। এই পৃথিবীর বিষাক্ত বর্জ্যে সকল নদী ও সমুদ্রের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে যত ধরণের জলজ পাণী ছিল তা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দেশীয় মাছ হারিয়ে গেছে। পানি এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানি না পেলে আমরাও টিকে থাকবো না। মানুষ নানা ধরণের পানি বাহিত রোগে ভোগছে। বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার জন্য নদী নালাকে দুষণমুক্ত রাখতে হবে।

বিলকিস জাহানঃ ভোলা থেকে নদী পথে ঢাকা আসার সময় বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দেখেছি। সেই পানির রং কালো এবং দুর্গন্ধ। আমাদের নদী বাঁচাতে হবে।

শাহীনুর বেগমঃ প্রতিবছর বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য দিবস পালন করা হয়। বিভিন্ন সংগন এটা করে থাকে কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তেমন কোন উদ্যোগ আমরা দেখি না। সরকারকে অবশ্যই এটা গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্ত কেন হলো জানতে চাই। আধুনিক কৃষি করতে গিয়ে, দেশীয় জাতের বীজ হারিয়ে ফেলেছি। খাদ্যের বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। দেশীয় জাতের বীজ দিয়ে চাষাবাদ করে প্রাণবৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হবে। অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তাঘাট করতে গিয়ে বন ধ্বংস করে ফেলছি। বনায়ন করতে গিয়ে আমরা দেশীয় জাতের ফল হারিয়ে ফেলেছি। আজ বিদেশী ফলে বাজার ছেয়ে আছে। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। আজকে আমাদের দাবি হলো একটি প্রাণ সম্পও আমরা হারাতে দেবো না।

মরিয়ম মান্নানঃ অপরিকল্পিত ভাবে কাজ করার জন্য জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধতার জন্য সাতক্ষীরা এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রাণবৈচিত্র্য হারিয়ে যাওয়ার কারণে গরীব মানুষ মাছ পায় না। কুড়িয়ে পাওয়া শাক পায় না। যাতে জলাবদ্ধতা না হয় তার জন্য আবেদন করেন। আর কোন প্রাণ যেন ধ্বংস না হয় সে দাবি জানান


মানব বন্ধন থেকে দাবি :

১. সমুদ্রের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য
২. প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষি ওপর জোর দিতে হবে
৩. বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হবে আমরা একটি প্রাণ সম্পদ ও হারাতে দিবনা।
৪. দেশীয় বীজ টিকিয়ে রাখতে হবে।
৫. আমাদের নদী বাঁচাতে হবে।
৬. বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার জন্য নদী নালাকে দুষণমুক্ত রাখতে হবে।
৭. প্যারাবনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে
৮. সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা অতি জরুরী
৯.পশু পাখিসহ সকল প্রাণ রক্ষা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *