তামাক উৎপাদন ও সেবন নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে

ফরিদা আখতার || Monday 07 November 2016

তামাক সেবন ও উৎপাদন যা-ই করুন না কেন তা স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও চারপাশে যারা আছেন, তাদের সবারই ক্ষতি করে। যে শিশু জন্ম নেয়নি, মায়ের পেটে রয়েছে, তার জন্যও তামাক সেবনকারী ক্ষতির কারণ হতে পারে। বড়ই নিষ্ঠুর ও হত্যাকারী এই পণ্য। নেশা জাগানো তামাকের কোনো ভালো গুণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এবং নেশা জাগানো যে কী ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, তা একমাত্র ভুক্তভোগী ও তার পরিবার জানে। এর ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক নেই, কিন্তু আফসোস হয় তামাকের নানা পণ্য, নানা ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিড়ি, জর্দাগুলোর রমরমা ব্যবসা চলছে। কোম্পানিগুলো নানা কৌশলে এ ক্ষতিকর পণ্যের প্রতি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে তাদের বেঁধে ফেলেছে।

তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বেশ আগেই। স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি প্রধান হয়ে দাঁড়ানোয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনে গৃহীত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) কনভেনশন প্রণয়ন করা হয় ২০০৩ সালে। বাংলাদেশ সরকারও এ সনদে স্বাক্ষর করেছে ১৬ জুন, ২০০৩ ও অনুস্বাক্ষর করেছে ১০ মে, ২০০৪ তারিখে। এবং ওই কনভেনশনের বিধানাবলি বাংলাদেশে কার্যকর করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫, (২০১৩ সালে সংশোধনী) প্রণীত হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশ সেদিক থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। তবে এফসিটিসির সব ধারা সব দেশে সমানভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নানা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ কনভেনশনে শুধু ধূমপান রোধ নয়; সব ধরনের তামাক পণ্য উৎপাদন, বিক্রি, কোম্পানির কৌশল সবকিছুই বাস্তবায়নের নানা দিক আলোচনায় এসেছে।

ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) ২০০৫ সালে কার্যকর করা হয়। এ সনদের তাৎপর্য হচ্ছে, বিশ্বের তামাকবিরোধী সব ধরনের প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও সংগ্রামের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৮০টি দেশ স্বাক্ষর করে এর চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ করছে। প্রতি দুই বছর পর এর কার্যকারিতা এবং বাস্তবায়নের নানা দিক পর্যালোচনা করা হয় এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হয়। এবারের সপ্তম সভা বা Conference of the Parties (COP7) অনুষ্ঠিত হবে ৭-১২ নভেম্বরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভারত সরকার এবং কনভেনশন সচিবালয়ের যৌথ উদ্যোগে। এফসিটিসি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করবেন। তামাক নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত সংগঠনের কিছু প্রতিনিধিও থাকবেন।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালায় নিয়ন্ত্রণের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও মোট ধূমপায়ী ও অন্যান্য তামাক দ্রব্য সেবনকারীর সংখ্যা কমছে না, বরং নতুন নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টি করা হচ্ছে যুব বয়সের নারী-পুরুষের মধ্যে। জনসংখ্যায় যুব বয়সীদের সংখ্যা বিশাল। এর অর্থ হচ্ছে, তামাক কোম্পানি নতুন তামাক সেবনকারী সৃষ্টির কাজ করে যাচ্ছে তরুণ যুব সমাজের মধ্যে মার্কেট পাওয়ার আশায়। অথচ এরাই হবে দেশের কর্মশক্তি। তাদেরই ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ কি রুগ্ন একটি জাতি হয়ে থাকবে?

এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। আন্তর্জাতিক সনদ মেনে বিভিন্ন দেশে আইন করে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে, কিন্তু নতুন সেবনকারী সৃষ্টির যে কৌশল কোম্পানি নিয়েছে, তার ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা এখনো নেই।

সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালোভাবে তামাকের কারণে মৃত্যু, রোগ এবং প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টির প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বে বছরে ৬০ লাখ মানুষ তামাকের কারণে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে দুঃখজনকভাবে ছয় লাখ মানুষ আছে, যারা নিজেরা ধূমপান করে না, কিন্তু ধূমপায়ীদের কাছাকাছি থাকার কারণে সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদের চিহ্নিত করা হয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হিসেবে। স্বভাবতই এদের মধ্যে নারী (৬৪ শতাংশ) ও শিশু (৩১ শতাংশ) রয়েছে, অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তাদের সংখ্যাই বেশি। এশিয়ায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১২ কোটি ১০ লাখ ধূমপায়ী রয়েছে।

তামাক সেবন মানে শুধু ধূমপান নয়। ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য যেমন জর্দা, সাদার পাতা ইত্যাদি পানের সঙ্গে খাওয়া এবং গুলের ব্যবহার আমরা অহরহ দেখছি। ধূমপান করলে আমরা যত আতঙ্কিত হই, পানের সঙ্গে জর্দা বা সাদার পাতা খেতে দেখে আমাদের উৎকণ্ঠা ততটা হয় না। কিন্তু এগুলোও তামাক দ্রব্য এবং সরাসরি শরীরে প্রবেশ করছে। আমাদের সমাজে এটি ‘বেয়াদবি’ হিসেবেও দেখা হয় না, ধূমপানকে যেমন করে দেখা হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশে ২০ কোটি ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনকারী রয়েছে, যা বিশ্বের মোট ব্যবহারকারীর ৯০ শতাংশ। ধূমপানের মধ্যে নারীদের সংখ্যা কম হলেও ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য ব্যবহারে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশেও ২৭ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের ব্যবহারকারী রয়েছে। অবশ্য জর্দা দিয়ে পান খাওয়া ফ্যাশনের মধ্যে পড়ে না বলে মধ্যবিত্ত নারীরা বেঁচে যেতে পারেন।

বাংলাদেশের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া খুব জরুরি, তার মধ্যে রয়েছে তামাকের ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরার জন্য সচিত্র সতর্কবাণী দেয়া। এর আগে লিখিতভাবে তামাক মৃত্যু ঘটায়, তামাক ক্যান্সার ও হৃদরোগের কারণ ইত্যাদি ছিল, কিন্তু ছবি না থাকলে তা চোখে পড়ে না, বা মনের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে না। এটিও মনে রাখার বিষয় যে, যারা তামাক দ্রব্য সেবন করে, তারা সবাই শিক্ষিত নয়। তাই এফসিটিসি সনদেই সচিত্র সতর্কবাণীর কথা আছে। বিশ্বের ৭৫টি দেশে সচিত্র সতর্কবাণী ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সতর্কবাণী কী হবে, তা সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মিলে বিভিন্ন  দেশের জন্য উপযোগী বাণী ঠিক করে দেয়; সেটা সিগারেট ও জর্দা-গুলের প্যাকেটে চোখে পড়ে এমনভাবে উপরের অর্ধেক অংশজুড়ে দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানির কারসাজিতে বাংলাদেশে গত মার্চ থেকে সিগারেট প্যাকেটের নিচের অংশে বিভিন্ন রোগের ছবি এবং জর্দা-গুলের গোল কৌটায় ইচ্ছামতো করে মুখের ক্যান্সারের ছবি দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি সরাসরি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের লংঘন।

সতর্কবাণীর পাশাপাশি উন্নত দেশ আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। কোম্পানি যেন তার ব্র্যান্ডকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি ব্যবহার না করতে পারে, তাই এখন দাবি হচ্ছে— একেবারে প্লেন প্যাকেজিং করতে হবে। কোনো প্রকার আকর্ষণীয় ছবি দেয়া যাবে না, সব প্যাকেট এক রকম হবে। এতে কোম্পানির আপত্তি আছে, তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে এ নিয়ম যেন প্রয়োগ করা না হয়।

একটি ইতিবাচক উদাহরণ হচ্ছে, সচিত্র সতর্কবাণীতে উরুগুয়ের মতো একটি ছোট দেশ উদ্যোগ নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনালকে মামলায় হারিয়ে দিয়েছে। ফিলিপ মরিস মামলা করেছিল যে, উরুগুয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সুইজারল্যান্ড ও উরুগুয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করেছে। সুইজারল্যান্ডে ফিলিপ মরিস কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত। মামলাটি করা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের আরবিট্রেশন প্যানেলের কাছে।

ফিলিপ মরিস উরুগুয়ের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা এবং তার কোম্পানির ব্র্যান্ড নাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। উরুগুয়ে সরকারের তামাকবিরোধী আইনের অধীনে সিগারেটের প্যাকেটে উভয় দিকে শতকরা ৮০ শতাংশ ছবিযুক্ত স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা থাকতে হবে এবং প্লেন প্যাকেজিংয়ের নিয়মানুযায়ী তার বিশেষ ব্র্যান্ড যেমন Marlboro Red অথবা Marlboro Gold দেয়া যাবে না। এ কারণে ফিলিপ মরিস উরুগুয়ের বাজার থেকে ১২টি ব্র্যান্ডের সিগারেট তুলে নেয়।

ফিলিপ মরিস অভিযোগ করেছে যে, উরুগুয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কারণে তার বুদ্ধিবৃত্তিক মেধাস্বত্ব অধিকার (intellectual property rights) ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং তার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। উল্লেখ্য, ফিলিপ মরিসের ১৮০ দেশে ব্যবসা আছে এবং তার বার্ষিক আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার, যা উরুগুয়ের বার্ষিক আয়ের চেয়েও বেশি; উরুগুয়ের বার্ষিক আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার। এ মামলায় উরুগুয়ে জিতেছে। এটি আশার কথা।

কোম্পানি শুধু দোকানে সারি সারি সিগারেট রেখে বিক্রির আশা করে না। তাদের যথেষ্ট উদ্যোগ নিতে হয়। যুব সমাজকে জড়িত করার জন্য খেলাধুলা, কনসার্ট ইত্যাদিতে তারা বিপুল পরিমাণ বিজ্ঞাপনমূলক বিনিয়োগ করে তাদের নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বিক্রি নিশ্চিত করে। সিগারেটে সরাসরি বিজ্ঞাপন যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি পরোক্ষভাবে আকর্ষণ সৃষ্টি করার কোনো কাজ করাও আন্তর্জাতিক সনদ এবং সেই আলোকে দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে নিষেধ রয়েছে। কিন্তু আইনের এই দিকটি খুব জোরালোভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না বলে গানের জগতে তামাক কোম্পানি বিশালভাবে অবস্থান করছে। এমনকি শাস্ত্রীয় সংগীতের মতো সংগীতেও তারা প্রবেশ করেছে কৌশলে।

চলতি বছর নভেম্বরে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রতি বছরের মতো ২৪-২৮ তারিখে শাস্ত্রীয় সংগীত অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা করেছে এবং আয়োজন এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এমন অনুষ্ঠান হচ্ছে, এটি আমাদের জন্য গর্বের এবং যারা সংগীত ভালোবাসেন, তাদের জন্য বড় সুযোগ বড় বড় ওস্তাদের সংগীত পরিবেশনা দেখা এবং শোনা। এমন আয়োজন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই হতে পারত কোনো কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকটা ছাড়াই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আসন্ন এ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ- বিএটিবির প্রচ্ছন্ন ও প্রত্যক্ষ উপস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। জানা গেছে, ভারতের বৃহত্তম তামাক কোম্পানি আইটিসি লিমিটেড (ভূতপূর্ব ইন্ডিয়া টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড) ২০১২ সালের নভেম্বরে ঢাকায় BENGAL ITC-SRA CLASSICAL MUSIC FEST-2012’ নামে একটি যৌথ সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমি (ITC-SRA) এ ইন্ডিয়া টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেডের (ITC) সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এ সংগীত একাডেমি সারা বিশ্বে ভারতীয় সংগীতের ঐতিহ্য তুলে ধরতে কাজ করে। উল্লেখ্য, বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) এ ভারতীয় তামাক কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

শাস্ত্রীয় সংগীত অসংখ্য সংগীতপিপাসু মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তাই তারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে কোম্পানি তার পণ্য বিক্রির স্বার্থে। এর আগে সরাসরি নিজের পৃষ্ঠপোষকতা প্রমাণ না করার জন্য ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩’ মেনে তারা অনুষ্ঠানের শিরোনাম থেকে ‘আইটিসি-এসআরএ’ অংশটুকু বাদ দিয়ে দেয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫(গ) ধারা অনুসারে, কোনো তামাক কোম্পানি এ ধরনের অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে না। কিন্তু তারা অন্য কৌশল নেয়। বিএটির এ দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিএটিবি ২০১৫ সালে উৎসবস্থলে একটি সিগারেট বিক্রয় কেন্দ্রসহ ধূমপান এলাকা (Smoking Zone) স্থাপন করে, যা পুরো আয়োজনে তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে। অথচ এ অনুষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে, যা আইনের ভাষায় একটি পাবলিক প্লেস এবং আইন অনুযায়ী ধূমপানমুক্ত এলাকা। কাজেই এবার যেন তা না হয়, সরকারকে সেটা লক্ষ রাখতে হবে। সে কারণে কোম্পানি পৃষ্ঠপোষকতা থেকে মুক্ত রাখার বিষয়টি আয়োজকদেরও ভাবতে হবে, যাতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে তামাক কোম্পনির ধোঁয়ায় পর্যবসিত করা থেকে রক্ষা করা যায়।

সবশেষে বলি, এবারের কপ৭-এর অন্যতম আলোচনার বিষয় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা জানি, তামাক চাষের কারণে খাদ্যঘাটতি, পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যের ক্ষতি এমনকি শিশুশ্রম ব্যবহারে শিক্ষার ক্ষতি হয়েই যাচ্ছে, তবুও দেশের কমপক্ষে ২৩টি জেলায় তামাক চাষ করা হচ্ছে এবং প্রতি বছর তারা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং আশা করা যায়, দ্রুত তা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হবে।

তামাক চাষ, উৎপাদন, বিক্রি ও সেবন সবকিছু মিলিয়ে এ দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব সরকারের। সেটি মাথায় রেখে আইনের বাস্তবায়ন চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *