তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) || Friday 08 November 2019
বিভিন্ন পত্রিকায় সেরা কর দাতা কারা হলেন তার খবর বেরিয়েছে। ভাল কথা। কিন্তু কর যারা দিচ্ছেন তারা কোন দয়া করে দিচ্ছেন না, এটা তাদের আয়ের উৎসের সাথে মিল রেখে কর ধার্য্য করা হয়েছে বলেই দিচ্ছেন। এটা কোন অনুদান নয়। বাংলাদেশে আয় বেশি হলেও কর দেয়ার সংস্কৃতি এখনো ভালভাবে গড়ে ওঠে নি, এবং কর ফাঁকি দেয়াটাই প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে তাই যারা কর দিচ্ছেন তাদের একটু বাহবা দেয়া হয়। অন্যদের উৎসাহ দেয়ার জন্যে। এই উৎসাহ দিতে গিয়ে সরকার এক বছর মেয়াদি কর কার্ড দিচ্ছেন, যার কারণে তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবেন। যেমন বিমান বন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেল বুকিংয়ে অগ্রাধিকার, কর কার্ডধারি নিজে ও তাঁর স্ত্রী বা স্বামী, নির্ভরশীল সন্তানের জন্য সরকারি কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার, আকাশ, রেল ও জলপথে সরকারি যান বাহনে যান বাহনে টিকিট প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার। এক কথায় তারা ভিআইপি। বিভিন্ন ক্যাটেগরির করদাতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
আমরা বিস্মিত যে এই তালিকায় আবারও জর্দা ব্যাবসায়ি মোঃ কাউছ মিয়া ব্যাবসায়ী শ্রেণীতে সেরা কর দাতা হিশেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অথচ গত বছরেই তাকে সেরা কর দাতা হিশেবে পুরুস্কৃত করার বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। কাজেই রাজস্ব বোর্ড এটা জানেন যে বেশি কর দিলেও পুরুস্কৃত করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ।
কাউছ মিয়া হাকিমপুরি জর্দা উৎপাদনকারি কোম্পানির মালিক। জর্দা একটি তামাক পণ্য, দেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংজ্ঞায় জর্দা নিয়ন্ত্রণযোগ্য তামাক পণ্যের আওতাভুক্ত। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম আছে, তার বিষয়ে প্রশ্ন আছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শিশু ও নারী শ্রমের ব্যবহার, ক্ষতিকর উপাদানের মিশ্রণ নিয়ে অনেক তথ্য আছে যা খুব উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এই পণ্য সেবন করেন বিশেষত নারী, এবং গরিব মানুষ। দেশের ২০.৬% (পুরুষ ও নারী) ধোয়াঁবিহীন তামাক সেবন করেন যার অন্যতম প্রধান পণ্য হচ্ছে জর্দা। পুরুষ ও নারীর ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের ১৬.২% এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ২৪.৮% ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। অর্থাৎ জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ব্যবহার নারীদের মধ্যেই বেশি।
একদিকে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান জর্দা উৎপাদনকারিকে “সেরা করাদাতা” হিশেবে পুরুস্কৃত করছেন অন্যদিকে সরকারেরই আর একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এই পণ্য কত ক্ষতিকর কাজ করছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-বিএফএসএ তামাকজাতীয় পণ্য হাকিমপুরী জর্দাসহ ২২টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত জর্দা, খয়ের ও গুলের নমুনা পরীক্ষা করে জর্দা ও খয়েরে মানবদেহের ক্ষতিকর এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার মতো মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পেয়েছে। নিঃসন্দেহে এগুলো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো দীর্ঘদিন খাওয়ার কারণে মাড়ি ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ হয়। এই সংস্থাটি ২২ প্রতিষ্ঠানের নমুনা পরীক্ষা করে বলেছে- দেশের অনেক মানুষ পান-জর্দায় আসক্ত। এই সব তামাক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানগুলো সিলগালা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএফএসএ।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ- বিএফএসএ আরও ঘোষণা দিয়েছে এগুলো শিগগিরই বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হবে। অন্যথায় মোবাইল কো্র্ট পরিচালনা করে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে।
বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও জানার কথা। অথচ তারা জেনেশুনে যারা ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবসা করে বিপুল পরিমানে মুনাফা অর্জন করে সরকারকে কর দিচ্ছে এখন তারা সেরা করদাতার তালিকায় রাখা হোল কেন এই উত্তর এনবিআর কি দেবেন? তামাক বিরোধী নারী জোটের পক্ষ থেকে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা দাবি করছি এনবিআর অবিলম্বে সেরা কর দাতা্র তালিকা থেকে কাউছ মিয়ার নাম প্রত্যাহার করবে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।