ফাহিমা খাতুন লিজা ও রওশন আকতার পাখী || Thursday 05 September 2019
টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার কৃষক ২০১৯ সালে কৃষকরা আমন ধান চাষ করতে সমস্যায় পড়েছেন। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং পানির অভাবে আমন ধানের বীজ লাগিয়েও চাষ করতে পারেন নি অনেক কৃষক। প্রায় ৬০-৭০% আমন ধানের জমি পতিত পড়ে আছে। তাদের সমস্যা বর্ণনা করেছেন কয়েকজন কৃষক। এই কৃষকরা মূলত স্থানীয় জাতের আমন ধান যেমন কার্তিক ঝুল, নাজিরশাইল, হরিঙ্গা দিঘা,সাদা দিঘা, পাটজাগ, গণকরায় ধানের চাষ করেন। এগুলো বন্যা সহনশীল জাত, কিন্তু আগাম বন্যা হওয়াতে গাছ বড় হবার আগেই তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আবার যখন পানির প্রয়োজন তখন বৃষ্টি হয় নি, এবং সেচেরও কোন ব্যবস্থা নাই। সাধারণত সেচের স্যালো মেশিন শীতকালীন বোরো ধানের জন্যে ব্যবহার হয়। স্থানীয় জাতের ধানের বীজের স্বল্পতাও তাদের পুণরায় চাষ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে গেছে।
নান্দুরিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ আলমগীর এক একর জমিতে কার্তিকঝুল ধান ছিট রোপন করেছিলেন। ধানের চারা ১হাত বড় হওয়ার পর আচমকা বন্যার পানি এসে সব ধানগাছ তলিয়ে যায়। এই বছর আগর বন্যা হয়। তিনি বলেন,পরে আর ধান আবাদ করেন নাই। কারণ বৃষ্টি নাই, মেশিন ষ্টার্ট দিয়ে জালা(চারা) ফেলতে হবে। পানির বড় সমস্যা। ধানও হবে না। ছোবা হবে। ধানের বাইল অর্ধেকও হবে না। ঘাসের মত শুধু গাছ হবে। কামলা খরচ ক্ষতি যাবে। ১জনের কামলা খরচ ৫০০ টাকা। এক একর জমিতে ১০ জন কামলা লাগবে। হাতে বেছনও নাই। পানি আগে এসে আগে চলে গেছে। আবহাওয়া ঘুরছে। এখন জমিতে পুরা পানি থাকার কথা। পর্যাপ্ত পানি না থাকা,অল্প পানি ভাদ্র মাসের তাপে জমির পানি গরমে তেতে আছে। আগে সকালে ভাত খেয়ে সারাদিন চকে থাকছি। এখন রোদে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। তাই আর ধান চাষ না করে রবি ফসল সবজী, সরিষা করার জন্য জমি ফেলে রাখছি।
একই গ্রামের কৃষক আমিনুর মিয়া ৭৪ডিসিমাল জমিতে হরিঙ্গা দিঘা, সাদা দিঘা ধানের ছিট বপন করে ছিলেন। জৈষ্ঠ্য মাসে ধান চাষ করলেও আষাঢ় মাসের আগাম বন্যার পানি এসে সব ধান তলিয়ে যায়। জমিতে পানি ঢুকলে আর বের হওয়ার রাস্তা নাই। হঠাৎ করে বন্যার পানি আসে। হাতে বীজ না থাকায় আলাদা করে চারা দিতে পারেননি। আবার দ্বিতীয়বার বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় নতুন করে চারা দেওয়ার সময়ও ছিল না। পানির সমস্যা এবং খরার কারনে টান জমিতে ধান চাষ করেননি । তিনি বলেন, এবার হুট করে পানি ঢুকে গেল আবার খরাও বেশি,রোদে তাপমাত্রা বেশি। আবার ১৫শতাংশ জমির চারা বন্যার পানিতে পঁচে যাওয়ায় রোপন করতে পারেন নাই। রবি মৌসুমে মসরিষা চাষ করার জন্য জমি ফেলে রাখা হয়েছে।
কৃষক মোঃ নুরুল হক কার্তিক ঝুল ধান চাষ করেছিলেন ৩৫ডিসিমাল জমিতে। কিন্তু বন্যার পানিতে সব ধান ডুবে যায়। জমিতে পানি না আসলে এখন ধান ফুলে বের হতো। আশ্বিন মাসে ধান কেটে সরিষা বোনা যেত। এখনও জমিতে পানি আছে। জমিতে কিছু ধানগাছ থাকলেও ফলন পাব না। ধান গাছ কেটে সরিষা আবাদ করতে হবে। হাতে বেশি বীজ না থাকায় নতুন করে আবাদ করতে পারেন নাই। নতুন করে টান জমিতে আবাদ করব এ ধরনের জমিও সবার নাই, কারো কাছে ধানের জ্বালাও নাই।
দশকিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক ঈমান আলীর ২.৫ একর জমিতে নাজির শাইল ধান লাগানো ছিল। হঠাৎ বন্যা হওয়ায় সব ধান ডুবে যায়। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ১ একর জমিতে পুনরায় লাগায়। বাকী জমি পতিত রয়েছে। তিনি বলেন, নিজের কোন ধানের জালা নাই। আবার বাড়ির বা গ্রামের আশেপাশে কোন জালা নাই। জালা না পাওয়া একটা বড় ধরনের সমস্যা। যদিও দুরে জালার সন্ধান পাই কিন্তু দাম বেশী। জালা ফেলে পুনরায় লাগানোর বাইন(সময়) নাই। যদিও নাবি(দেরি) করে লাগানোর ইচ্ছা করি ঘরে বীজ নাই। বৃষ্টির পানি হলে জমিতে আলাদা পানি দিতে হয় না। খরা হওয়ায় জমিতে পানি নাই। স্যালো মেশিনওয়ালা মেশিন চালাবে না। বৃষ্টির উপর নির্ভর করে ১ একর জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। শুধু জালা কিনতে ২০০০টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও চাষ খরচ, নিড়ানী খরচতো আছেই। সব মিলিয়ে যা খরচ হয় তা ধান বিক্রি করে খরচ না উঠায় আমন ধান চাষের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
সমস্ত মাঠে প্রায় ৬০/৭০ ভাগ আমন ধানের জমি বর্তমানে পতিত পড়ে আছে
কসবা আটিয়া গ্রামের ছালাম মিয়ার মোট আবাদী জমি ১ একর। প্রথমে ধান লাগানোর পর বন্যায় তলিয়ে গেছে। পরে এলেঙ্গা থেকে নাজিরশাইল ধানের জালা কিনে এনে ২৪ডিসিমাল জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। জমিতে এখন পানি নাই। জমিতে পানির অভাবে ফাটল ধরেছে। ধানের চারা লাল হয়ে যাচ্ছে। স্যালো মেশিন এ মৌসুমে চালাবে না। কারণ সিকিভাগ আবাদ করলেও ধানের ফলন কম হওয়ায় স্যালোওয়ালার লাভ থাকে না। বৃষ্টি কিছু না কিছু হবে এই আশায় ধান লাগিয়েছেন।
পানির অভাবে গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না
একই গ্রামের রোজনু মিয়া বলেন, “আমার মোট আবাদী জমি ১৮০শতাংশ। প্রথমে ধান লাগানোর পর বন্যায় ডুবে গেছে। পরে কার্তিকঝুল ধানের জালা কিনে ৬০ডিসিমাল আবাদ করা হয়। বাকী জমিতে চাষ করার মত বীজ নাই। অন্য জায়গা থেকে চারারও ব্যবস্থা করতে পারি নাই। কিন্তু ভাদ্র মাস জুড়ে খরার থাকায় পানির খুব সমস্যা হচ্ছে। সেচের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির উপর নির্ভর করে আছি।
শুধু পানি আর বীজের সমস্যা নয়, শ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। কৃষক মোঃ খসরু মিয়ার ১৩ শতাংশ আবাদী জমিতে প্রথমবার কার্তিকঝুল ধান লাগানোর পর সব ধান ডুবে যায়। এর পর তিনি আর ধান আবাদ করেননি। কারণ নিজের ধানের জালা নাই। জমিতে চাষ করার মত পানির ব্যবস্থা নাই। তাছাড়া শ্রমিক পাওয়া যায় না, এবং দামও বেশি। এলাকার বেশিরভাগ শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গেছেন। আমন ধান চাষের সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ধান বিক্রি করলে লাভ না হয়ে লোকসান হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে চাষ করলে খরচ কম পড়ে।
চাল আটিয়া গ্রামের লাল মিয়াও শ্রমিকের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তাঁর মোট আবাদী জমি ১ একর ৫০শতাংশ। সবটুকু জমিতে ছিট আমন বুনেছিলেন। বন্যায় তলানোর পর আবার ৬০শতাংশ জমিতে নাজিরশাইল ধান লাগান। ৯০শতাংশ জমি পতিত পড়ে আছে। কৃষিকাজে শ্রমিক পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও দাম বেশী। কৃষি কাজ বাদ দিয়ে কৃষকরা অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছে-অটো, রিক্সা, সিএনজি চালায়। কেউ বা ইটের ভাটায় কাজ করছেন। ধানের দাম না থাকায় ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমছে। পানির অভাবে গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না।
হিংগানগর গ্রামের কৃষক আলফু মিয়ার ৭৫ডিসিমাল জমিতে পুনরায় পাটজাগ ধানের গোছা গাড়া হয়। তাঁর মোট আবাদী জমি ১ একর ২৫শতাংশ। বাকী জমি পতিত আছে। বৃষ্টির উপর নির্ভর করে লাগানো হয়েছে। স্যালো মেশিন ওয়ালার লাভ না হওয়ায় এ মৌসুমে মেশিন চালাবে না। পানি বা সেচ দেওয়ার কোন সুব্যবস্থা নাই। খরার কারণে ধানের গাছ বাড়ছে না।
জমিতে সেচের ব্যবস্থা নাই
কৃষক ঠান্ডু মিয়ার মোট আবাদী জমি ৩ একর। পাটজাগ ধান চাষ করেছেন ১৩৫ডিসিমাল জমিতে। বাকী জমি চারার ব্যবস্থা করতে না পাওয়ায় পতিত পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ধানের জালা নাই। এলেঙ্গা পাওয়া গেলেও সেখান থেকে আনতে খরচ বেশি হওয়ায় ধান লাগানো হয় নাই। শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম বেশি। আবার ১মাসের বেশি ধরে খরা হচ্ছে। খরা মোকাবেলা করার কোন উপায় নাই। বৃষ্টির উপর নির্ভর করে আছি। তাতে ফলন কম হবে। ধান বিক্রি করতে গেলে দাম কম ।
গড়াসিন গ্রামের কৃষক আব্দুল রহিম ১ একর জমিতে কালিজিরা ও চামাড়া ধানের চাষ করেন। আগাম বন্যার পানিতে সব ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। ধান চাষে তার ৩৫হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান নষ্ট হওয়ার পর পুনরায় ৫০শতাংশ জমিতে ধানের চাষ করেন। তিনি বলেন, এই ধান হবে কিনা জানি না। খরার কারনে জমিতে পানি নাই। এখন পানির দরকার এখন নাই। পানির অভাবে গাছ লালচে হয়ে গেছে। আগর পানি এসে কৃষককে ক্ষতিগ্রস্থ করে দিয়ে গেছে। ঋণ করে ধান চাষ করছি। কৃষক ইউনিুছ আলীর ৭৫ডিসিমাল জমির চামাড়া ধান বন্যার পানিতে পঁচে গেছে। পরবর্তীতে আর বোনা হয় নাই। হাতে আর বীজ নাই। সময় শেষ, ধানের জালা কেনার মত টাকাও নাই। টান জমিতে লাগালে ধান হবে না। পানির ব্যবস্থা নাই। এই মাসে খরা বেশি। রোদের তাপ বেশি। রোদে যেতে পারি না অস্থির লাগে।
খরায় ধানের চারা লাল হয়ে গেছে
মৌশাকাঠালিয়া গ্রামের মোঃ হাফেজ উদ্দিন মিয়া বলেন, ৮০ডিসিমাল জমিতে হাল বেয়ে গণকরায় ধান বোনার ৮দিন পর বন্যার পানিতে ধান ডুবে যায। পরে হালি(চারা) কিনে বুনতে পারি নাই টাকার অভাবে। কারণ হাতে বীজ নাই। পানির ব্যবস্থা নাই, শ্রমিকের দাম বেশি। অন্য জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করে বোনার ইচ্ছা থাকলেও খরার কারণে আবাদ করি নাই। টান জমিতে পানির বেশি সমস্যা। আমাদের গ্রামে অন্যান্য কয়েকজন কৃষক আবাদ করলেও পানির কারণে তারা দুঃশ্চিন্তায় আছেন। তারা বলছেন জমি পতিত রাখলেই ভাল হতো। এতো টাকা খরচ করে চাষ করেও ভাল ফলন পাব না।
কৃষক আতর মিয়া ৭২ডিসিমাল জমিতে সাদাঢেপা ছিট বুনে ছিলেন। বন্যায় নষ্ট হওয়ার পর আবার পাহাড়ে থেকে লাল শাইল ধানের চারা কিনে গোছা রোপন করেন। কয়েকবার মেশিনয়ালার কাছ থেকে পানি দিয়েছেন। তিনি বলেন, কয়েক বার মেশিনয়ালা পানি দিলেও তার লাভ না থাকায় মেশিন চালু করেননি। সময়মত পানি না পেয়ে ধানের গাছ লাল হয়ে গেছে। এবার আবাদে খরচও উঠবে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণগুলো খুব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। যখন মৌসুম শুকনো থাকার কথা তখন হয়েছে বন্যা, আর যখন জমিতে পানি থাকার কথা তখন বেজায় শুকনো। এমনকি যে কৃষক মাঠের রোদকে পরোয়া করে না, সেই কৃষক বলছে তাপের কারণে মাঠে থাকা যাচ্ছে না। এবার বেশ কিছু স্থানীয় জাতের আমন ধানের চাষ ব্যাহত হবে, অথচ কৃষকের জমির একটি বড় অংশ পতিত থেকে যাবে।
আবাদী ধানের জমি, বন্যার পরবর্তী অবস্থা
কক্সবাজার জেলা, মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরাও এবারে হঠাৎ বন্যা এবং খড়ার কারণে আমন ধানের আবাদে যে ক্ষতিতে পড়েছে সেই তথ্যও এখানে সংযুক্ত করা হলো-
কক্সবাজার জেলা, মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা আমন ধানের বীজতলা ঠিক সময়ে দিতে পারে নাই। যে সময় বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তা হয় নাই। যখন বৃষ্টি হলো তখন অতি বৃষ্টি। ফলে গ্রামের প্রায় অর্ধেক ভাগ কৃষক জমি আবাদ করতে পারে নাই। এখানকার কৃষকেরা স্থানীয় ধান পাইজাম, সুম্মা, বিন্নী এবং নম্বরী ধানের (বি আর ২৮, ২৯, ১১, ৩৯ ইত্যাদি) আবাদ করে থাকে। ১৯৯১ সালের সাইক্লনের পর থেকে এখানকার কৃষকদের দেশী বা স্থানীয় জাতের বীজ হাত ছাড়া হয়ে গেছে। কৃষকেরা আবার দেশী এবং স্থানীয় জাতের ধান ফিরিয়ে আনার জন্য নয়াকৃষি আন্দোলনের সাথে এবত্রে কাজ করছে।
শাপলাপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের এবারে ৪০ শতক জমিতে পাইজাম ধানের বীজতলা করতে পারে নাই। নিজের হাতে ছিল পাইজাম ধানের বীজ। বাজার থেকে কিনেছে বিআর ৩৯ ধান। কিন্তু আষাঢ় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং বৃষ্টিও ছিল বেশী। বীজতলায় পানি ধরে রাখতে পারেনি বলে বীজতলায় বীজ দিতে দেরী হয়েছে। সময় অনুসারে বীজতলায় বীজ দিতে পারেনি। আবু তাহেরের জমি উঁচু ছিল। পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। আবার যখন জমিতে ধান রোপন করা হয় তখন গরমও খুব বেশী ছিল। যার কারণে ধানের আগা পুড়ে যায়। এবারে শ্রমিকের মজুরীও ছিল বেশী। গত বছর ধান রোপনের জন্য শ্রমিকের দাম ছিল ৪০০/- টাকা। এ বছর শ্রমিকের দাম ১০০ (একশত) টাকা বেশী। পানের বরজ বেশী করার কারণে শ্রমিকের দাম বাড়ছে। শ্রমিক পেতেও কষ্ট হয়েছে।
বন্যার পানিতে কিছু কিছু ধানের গাছ পঁচে গেছে
শাপলাপুর গ্রামের কৃষক পেটান মিয়া ৪০ শতক জমিতে পাইজাম ধানের বীজতলা করেছে নিজের টিউব-ওয়েলের পানিতে। পাইজাম ধানের বীজ ছিল নিজের বাড়ির। বাজার থেকে কিনেছিল ৩৯ ধানের বীজ। দুই ধরনের ধান করেছে, পাইজাম এবং বিআর ৩৯ ধান। পাইজাম ধানের বীজ নিজের ছিল। বিআর ৩৯ ধানে বীজ কিনতে হয়েছে। এই ধানের বীজতলা করার সময় বৃষ্টি ছিল না। এদিকে সময় চলে যায়। তাই টিউব-ওয়েলের পানি দিয়ে বীজতলা করে। কিন্তু টিউবওয়েলের পানিতে ধান রোপন করার পর সমস্যা হয়েছে। বীজতলা করার পরই শুরু হয় অতি বৃষ্টি। বেশী বৃষ্টিতে ধানের জমিতে পানি জমে। কারণ পেটান মিয়ার জমি ছিল নিচু। পানি জমে থাকার কারণে ধানে পোকার আক্রমণ হয়েছে। শ্রমিক পেতে কষ্ট হয়েছে, গত বছর শ্রমিকের মজুরী ছিল ৪০০ টাকা এবার শ্রমিকের মজুরী ৫০০/- টাকা করে দিতে হয়েছে।
পশ্চিম পাড়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল হক ৮০ শতক জমিতে নিজের টিউব-ওয়েরের পানি দিয়ে পাইজাম ধানের বীজতলায় বীজ ফেলেছিল। কিন্তু ধান রোপনের পর পাইজাম ধানের আগা গরমে লাল হয়ে যায়। আবার বেশী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ী ঢলের পানিতে কিছু ধান নষ্ট হয়ে যায়। পাহাড়ী ঢলের পানির সাথে বালি আসার কারণে ধানের গাছ বালির নিচে চাপা পড়ে। এবারে ধানের আবাদ করতে শ্রমিক পেতে কষ্ট ছিল। কারণ আগে এই এলাকায় মানুষ গরিব ছিল। এখন এলাকার বেশী মানুষ বিদেশ গেছে চাকুরীর আশায়। শ্রমিক না পাওয়ার আরও একটি কারণ ছিল, পানের বরজের কাজ এবং আমন ধানের চাষের কাজ এক সাথে শুরু হওয়াতে শ্রমিকের সংকট হয়েছে। জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরী ছিল ৫০০/- টাকা।
বদরখালী মগনামা পাড়রার কৃষক আবু জাফর, শাহাব উদ্দীন ও কৃষক শাহ আলম তিন জন-ই ৪০ শতক জমিতে সুম্মা এবং পাইজাম ধানের আবাদ করেছিল। কিন্তু আষাঢ় মাসে ২য় সপ্তাহ থেকে ভারি বর্ষণের কারণে এলাকার সব জমি কোমড় পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। শ্রাবণে বৃষ্টি কম হওয়ায় বিলে পানি শুকিয়ে যায়। শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজতলায় জালা ফেলা হয়। গত বছল শ্রমিকের মজুরী ছিল ৫০০/- টাকা। এবারে লবণ মাঠের মৌসুম না হওয়ায় শ্রমিকের মজুরীর কোন পরিবর্তন হয়নি। শ্রমিক পেতে কষ্ট হয়নি। এলাকায় বেশীর ভাগ কৃষকরা বিআর ১১, ১৪, ৩৩, ৩৪, ৩৯, ৭৫ ধান করেছে। সুম্মা ধানের বীজ এবং বিআর ৩৯ কৃষকের নিজের বাড়িতে রাখা বীজ ধান। তবে বেশীর ভাগ কৃষক বাজার থেকে নম্বরী ধানের বীজ কিনেছে।