তামাকে মানুষ মরছে আর কোম্পানি মুনাফা লুটছে!

তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) || Sunday 23 June 2019

কালো কাপড় প্রতিবাদের ভাষা।

তামাকে মানুষ মরছে অথচ কোম্পানি কামাচ্ছে মুনাফা। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবার জন্য নারী নেমে এসেছেন রাস্তায়। প্রতিবাদ করছেন। তাঁরা বলছেন, নিদেন পক্ষে তামাক দ্রব্যে ওপর কর বাড়াও, যেন তামাকের নেশা কিছুটা হলেও ছুটে যায়। তামাক কোম্পানির লাগাম টেনে ধরুন

বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তামাকের বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা  করা হয়েছে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাজেটে। তামাকজাত পণ্যের উপর আশানুরূপ কর আরোপ করা হয়নি। তামাকাজাত পণ্যের ব্যবহার কমানোর জন্য এ বাজেটে কোন প্রতিফলন নাই।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের চুড়ান্ত বাজেটে তামাকজাত পণ্যের উপর কার্যকর ও বর্ধিত হারে কর আরোপের দাবীতে “কালো কাপড়ে নারীর প্রতিবাদ” শিরোনামে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ও উবিনীগের আয়োজনে ২৩ শে জুন, ২০১৯ তারিখে শাহবাগ যাদুঘরের সামনে বিকাল ৪:৩০ মিনিট থেকে ৫:৩০ মিনিট পর্যন্ত এক মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ মানব বন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চলচিত্র ও টেলিভিশনের সুনামধন্য শিল্পী জনাব দিলারা জামান শিক্ষিকা বৃন্দ, লেখিকা বৃন্দ, বাংলাদেশ গাল গাইড, সাংবাদিক, তামাক বিরোধী সংগঠন কর্মীবৃন্দ।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে তামাকজাত পণ্যের উপর করারোপের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষার জোর দাবী উপেক্ষা করে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ি এবং নিন্মস্তরে সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রেখে বাজেট প্রস্তাব করেছে। এতে বিড়ি এবং নিন্মস্তরে সিগারেটের মূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে।

অন্য দিকে সিগারেটের কর কাটামো সহজতর ও যুগোপযোগী করা, বর্তমান বহুস্তর বিশিষ্ট এডভ্যালোরেম (মূল্যের শতভাগ হার) পদ্ধতি পরিবর্তে সিগারেটের ক্ষেত্রে দুটি মূল্যস্তর প্রচলন এবং এডভ্যালোরেম পদ্ধতির পাশাপাশি সর্ম্পূরক শুস্কের একটি সুনিদিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাস্ক) আরোপ করার জন্য তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছে। এ দাবী উপেক্ষা করে সিগারেটের কর কাঠামোর সংস্কার প্রস্তাব না করে তামাক কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ করে দিয়েছে এবারের প্রস্তাবিত বাজেট। যে কারনে ধারনা করা হচ্ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়বে এবং ধূমপানের কারনে নারী ও শিশুরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

জর্দা গুলের মত মারাত্মক ক্ষতকর ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর ট্যারিট ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে খুচরা মূল্যের উপর করারোপ পদ্ধতি প্রচলন একটি প্রশংসনীয় উদ্যাগ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের উৎপাদন ও বিপনন চলে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিতভাবে। দেশের আনাচে কানাচে ছোট বড় মাঝারী পর্যায় বহু কারখানায় এ সকল পণ্য উৎপাদন হয় যা সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে যার কারনে সরকার বিপুল পরিমানে রাজস্ব হারাচ্ছে।

তামাক ও তামাকজাত পন্য রপ্তানি উৎসাহিত করার অজুহাতে অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের উপর আরোপিত ১০% রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এতে দেশে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উৎপাদনকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানী খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি করবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলবে এটি অত্যান্ত উদ্বেগ জনক।

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রের আšজাতিক চুক্তি এফসিটিসি (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এ ছাড়া মানণীয় প্রদান মন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার নিমূল করার ঘোষনা দিয়েছেন। এফসিটিসি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং প্রধান মন্ত্রীর ঘোষনা বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী কর কাঠামো করা দরকার। যার কোনই প্রতিফলন এবারের বাজেটে পড়ে নাই।

আজকের এ মানব বন্ধনের মাধ্যমে তামাকরে ভয়াবহতা মোকাবেলা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে আমাদের সুনিদিষ্ট দাবী হচ্ছে:

  • নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা;
  • নিম্নস্তরের সিগারেটের উপর বিদ্যমান ৫৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ৬০ শতাংশ এবং মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে বিদ্যমান ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে ৭০ শতাংশ নির্ধারণ করা। প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট করা আরোপ করা;
  • বিড়ির ফিল্টার- ননফিল্টার মূল্যবিভাজন তুলে দিয়ে ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা;
  • প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা; ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের উপর যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ৩ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা;
  • অপ্রক্রিয়াজাত তামাকের উপর বিদ্যমান ১০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক এবং প্রক্রিয়াজাত তামাকপণ্যের ওপর পুনরায় ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা;
  • জনস্বার্থে তামাক কোম্পানিগুলোর উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ সুযোগ বাতিল করতে বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ৪৬ ধারার অন্তর্গত উপধারা ৩ এর দফা ঙ পুনর্বহাল করা, যেখানে তামাক ও এলকোহলযুক্ত পণ্যের ক্ষেত্রে এধরনের সুযোগ গ্রহণ রহিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *