বীজ, কৃষি ও জীবন

ফরহাদ মজহার, নয়াকৃষি আন্দোলন || Thursday 25 April 2019

নয়াকৃষি আন্দোলন এখন আর নতুন কোন আন্দোলন না। আজ নয়াকৃষি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। অনেক বড় বড় সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক আন্দোলন নয়াকৃষিতে আগ্রহী। খাদ্য, কৃষি, প্রাণ ও পরিবেশ নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় তাঁরা নয়াকৃষি সম্পর্কে জানেন, বা খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেন। নয়াকৃষি বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পরিচিত এবং নয়াকৃষির গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য  স্বীকৃত, অনেক সময় তাঁরা নয়াকৃষির সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন। সারা পৃথিবী এখন অর্গানিক বা সার-বিষ মুক্ত কৃষির ওপর জোর দিচ্ছে, ভবিষ্যতের কৃষি ঐ দিকেই যাচ্ছে। যেতে বাধ্য। দুনিয়াকে বিষ আর রাসায়নিক পদার্থে দূষিত করলে মানুষসহ কোন জীবই বাঁচবে না, এটা যে কেউই বুঝতে পারে।

প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ ঠিকঠাক রাখতে পারলে প্রকৃতি আমাদের সম্পদের গোলা ভরিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষক তাদের হাজার বছরের কৃষির অভিজ্ঞতা ভুলে গিয়ে বহুজাতিক বিষ কোম্পানি, বীজ ব্যবসায়ী ও মুনাফাখোর ধান্দাবাজদের ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছে বারবার। বহুজাতিক কোম্পানি বাহারী বিজ্ঞাপনে কৃষককে বিভ্রান্ত করছে। আজকাল তাদের ভাড়াখাটা কিছু ‘বিশেষজ্ঞ’ দাবি করছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এখানে আর প্রাকৃতিক চাষাবাদ সম্ভব নয়। এখন নাকি কোম্পানির তৈরি বন্যা, খরা ও লবন সহিষ্ণু বীজ দরকার। আর আমরাও প্রচারের চাকচিক্যে বহুজাতিক কোম্পানীর ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছি। আমাদের বীজ তাদের দিয়ে দিচ্ছি, অথচ আমাদেরই রয়েছে বহু বন্যা, খরা ও লবন সহিষ্ণু ফসলের বীজ। কারণ আবহাওয়ার রূপান্তরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চাষাবাদ করার অভিজ্ঞতা আমামদের সাম্প্রতিক নয়, হাজার বছরের। বন্যা বিধৌত এই বদ্বীপে আমরাই ধানের আবাদ করেছি, ফসল ফলিয়েছি। নোনা মাটিতে আবাব্দ হবার কথা নয়। কিন্তু  লবণাক্ত বঙ্গোপসাগরের তীরে নোনামাটিতে আমরাই আবাদ আবিষ্কার করেছি। খরা ও সামুদ্রিক উপকূলে লবনের মাত্রা বেড়ে গেলে সেই পরিবেশের উপযুক্ত ফসল উদ্ভাবন করেছি। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষদের আবিষ্কৃত এইসকল মূল্যবান বীজ নিয়ে যাচ্ছে বিদেশিরা, নিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি। আবার সেই বীজ থেকে তাদের পেটেন্ট করা বীজ আমাদের কাছেই তারা আবার বিক্রি করছে। বলছে, আমামদের খরা, বন্যা, ঠাণ্ডা সহিষ্ণু জাত নাই। এখন জল্বায়ু বিপর্যয়ের কারণে কোম্পানির বীজই চাষ করতে হবে। আর কোম্পানি চাইনে এই সুযোগে জিএমও বা বিকৃত বীজ আমাদের গছিয়ে দিক।

আমাদের বীজের ‘পেটেন্ট’ নাই। অর্থাৎ আইনের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা নাই। তাই যে কেউই বীজ বা প্রাণসম্পদ চুরি করতে পারে। কিন্তু কোম্পানির বীজে পেটেন্ট থাকে, তাই তার জন্য রয়েলটি দিতে হয়। অথচ খোঁজ নিলে ধরা পড়ে কৃষকের বীজই কোম্পানি কাঁচা মাল হিশাবে ব্যবহার করেছে। কৃষক তার আবিষ্কারের কোন প্রতিদান পায় না। উলটা উচ্চ মূল্যে সেই বীজ বাজার থেকে কিনতে হয়। কৃষকের বীজ প্যাটেন্ট করে তারা আবার কৃষককে দিচ্ছে। আমরা আমাদের বীজ হারাচ্ছি আর বহুজাতিক কোম্পানীর উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। আমাদের পানি সহিষ্ণু শস্য আছে, ক্ষরা সহিষ্ণু শস্য আছে, অধিক পানির শস্য আছে, অল্প পানির শস্য আছে, কিন্তু সেইসব নিয়ে আমামদের কোন গবেষণা নাই বললেই চলে। আমরা বহুজাতিক কোম্পানির চটকদার প্রপাগান্ডা ও বিজ্ঞাপনে আমাদের বীজ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছি। এখন কোম্পানির লোকেরা পানি সহিষ্ণু , ক্ষরা সহিষ্ণু নানান ধানের বীজ আমাদের কৃষকদের কেনার কথা বলছে। কিন্তু আমাদের নিজেদেরই পানি সহিষ্ণু ধান আছে, ক্ষরা সহিষ্ণু ধান আছে, অধিক পানির ধান আছে, অল্প পানির ধানও আছে। কারো ওপর বাংলাদেশের কৃষকের নির্ভর হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি।


seed

বীজ চুরি হবার ফলে আমরা বীজ ও কৃষির সম্পর্ক ভুলে যাচ্ছি। বীজ ও কৃষিকে কখনোই আলাদা করা যায় না। তাই কৃষকের অবশ্যই বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। কৃষকের ঘর থেকে বীজ হারিয়ে গেলে কৃষক জমি দিয়ে কি করবে? তাকে কৃষি কাজের জন্য কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। দেশের কথা ভাবুন, একটি দেশ যদি তাদের বীজ হারিয়ে ফেলে তাহলে ভূখণ্ড দিয়ে তারা কি করবে? বীঝারা দেশে সার্বভৌমত্ব, সরকার ইত্যাদি কথারও কোন মানে দদাঁড়ায় না, কারন খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোম্পানির একচেটিয়া কিম্বা বিদেশী রাষ্ট্রের গোলাম হয়েই আমাদের থাকতে হবে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই দেশে ব্যবসা করতে এসেছিল, তারপর লর্ড ক্লাইভ যুদ্ধ করে আমামদের ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ভূমি হাতছাড়া হবার ফলে দুইশ বছর আমাদের ইংরেজের গোলামি করতে হয়। এখন কোম্পানির যুগ আর নাই, আমরা উপনিবেশ বা ব্রিটিশ শাসনের অধীন না। এখন চলছে পুজিতান্ত্রিক গোলকায়ন। দুনিয়া চলে গিয়েছে পুঁজির অধীনে আর তা বাস্তবায়িত হচ্ছে বহুজাতিক কর্পোরেশানের মাধ্যমে। কেউ এখন লর্ড ক্লাইভের মতো জমি দখল করতে আমাদের মতো কৃষি প্রধান দেশে আসে না। তারা জমি দখল করবার জন্য যুদ্ধ করছে তেল ও অন্যান্য জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশে। কারণ জ্বালানি ভূমির তলায় থাকে। কিন্তু আমাদের তারা গোলাম করছে বীজের দখল কুক্ষিগত করে।  বীজ ডাকাতির জন্য। তারা জানে আমাদের বীজ ব্যবস্থা ধ্বংস করা গেলে আমরা বীজের জন্য বহুজাতিক কোম্পানির দ্বারস্থ হবো। তাদের কাছ থেকে বীজ না কিনলে কৃষকের জমি পতিত থাকবে।

বীজ হারা হবার আক্ষরিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় বীজ বিদেশিদের দখলে চলে গিয়েছে, বীজের ওপর যাদের দখল কার্যত জমি হয়ে যায় তাদেরই। কোম্পানি কৃষকের বীজ নিয়ে প্যাটেন্ট করে, কোম্পানিকে রয়েলটি দিয়ে কিনে না নিলে সেই বীজ পাওয়া যায় না। কিন্তু কোম্পানির বীজ থেকে আমরা যেন আবার নতুন বীজ রাখতে না পারি তাই বিক্রি করা হয় হাইব্রিড বীজ। হাইব্রিড বীজ কৃষক ঘরে রাখতে পারে না।

চুরি করা গাড়ির যেমন প্লেট নাম্বার বদল দেওয়া হয় তেমনি বীজ চুরি করে সেই চুরি লুকাবার জন্য বীজে নাম্বার লাগানো হয়। বীজ এখন আর আমরা জাতের নাম অনুসারে চিনি না, নম্বর দিয়ে বুঝি। নাম্বার এই কারণেই দেয় যে, যাতে কৃষকের কাছ থেকে হরণ করা বীজ কৃষক আর চিনতে না পারে। নাম্বারি ধান প্রবর্তন মূলত বীজ ডাকাতি লুকাবার একটি কৌশল মাত্র। ব্রি ২৮ বা ব্রি ২৯ শুনলে আমরা কৃষকের কোন বীজ দিয়ে ধানগুলি তৈরি হয়েছে তা আর ধরতে পারি না। বিজ্ঞানিরা দাবি করেন এটা তাদের আবিষ্কার। কিন্তু যে ধান দিয়ে নতুন জাত বানানো হয়েছে সেগুলো কার আবিষ্কার? বীজে নম্বরি পদ্ধতি চালু করার মানে কৃষকের দেওয়া নাম বা কৃষকের পরিচিত নাম পরিবর্তন, কৃষকের সাথে প্রতারণা। আগে সরকারি বিজ্ঞানিদের দিয়ে এই কাজ করানো হয়েছে। এখন কোম্পানীগুলো নিজেরাই সেটা করে। কিন্তু নিজেরা যখন প্যাটেন্ট করে তখন কোম্পানির ব্রান্ড নাম দেয়। কোম্পানির দেওয়া নাম দেখে বোঝার উপায় থাকে না কোন দেশের কৃষকের কাছ থেকে আসল বীজের উপাদান চুরি করা হয়েছে।
সুতরাং, ভুল করবেন না, এখন যুদ্ধ বীজ নিয়ে। আমাদের লড়াই আমাদের নিজেদের বীজের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আমাদের নয়াকৃষি আন্দোলনে কৃষক বোনদের বিখ্যাত শ্লোগান হচ্ছে: ‘বোনেরা, বীজ হাতছাড়া করবেন না’। বোনেরা কেন? কারন বোনেরাই আজ অবধি বীজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি বীজ রক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এই যুদ্ধে বোনেরাই সেনাপতি।


FM
বীজ রক্ষার ক্ষেত্রে কৃষক বোনদের আগ্রহ প্রবল। তাঁরা মনোযোগ দিয়ে বীজ রক্ষার কথা শুনছেন।


আমরা টাঙ্গাইলে সভা করছি। চামারা ধান এখন আর টাঙ্গাইল অঞ্চলে পাওয়া যায় না, পেলেও আগের তুলনায় খুব কম। কিন্তু চামারা ধান এই এলাকায় প্রচুর হত। পানির ধান। অর্থাৎ পানি সহিষ্ণুতা ছিল তার অসাধারণ গুণ। ছড়া ছিল এদেশে, ‘রিশতার মধ্যে মামারা, যদি থাকে নানি/ ধানের মধ্যে চামারা, যদি থাকে পানি’। আর এই জাতের ধান ছিল এই অঞ্চলের আবহাওয়ার অনুকূল।

পরিবেশের ভারসাম্য আমরা কিভাবে রক্ষা করব? যদি পরিবেশের সঙ্গে ফসলের সম্পর্ক আমরা ভুলে যাই। জমির মাটি কেন এবং কিভাবে উর্বর করব? যদি কোন জমিতে কী ধরণের ফসল হয় সেই সব না জানি, আর ফসলের জাতটাই আমরা হারিয়ে ফেলি। শুধু গোবর দিলেই কি সার হয়? গাছ কিভাবে জমির মাটি উর্বর করে, কিভাবে গাছ খাদ্য উৎপাদন করে তার সবই আমাদের জানতে হবে।

একসময় আমরা বহু কিছু জানতাম। কিন্তু এখন আমরা মূর্খ হয়ে যাচ্ছি। কারন কৃষি যে জ্ঞানচর্চার সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও আন্তরিক পদ্ধতি আমরা তা আর বিশ্বাস করি না। কৃষি আর কৃষককে ধ্বংস করে ‘আধুনিক’ হওয়াকেই আমরা ‘সভ্য’ হওয়া বুঝি। প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি নিত্যদিন সম্বন্ধ চর্চার কারবার কৃষকই করেন। বীজ বা ফসলের জাত সেই কারবারের প্রধান একটি উপায়। বীজের সঙ্গে প্রাণ ও প্রকৃতির সম্বন্ধ সম্পর্কে যদি কোন জ্ঞানী থেকে থাকেন, তবে তিনি কৃষকই। এমনকি গ্রহ নক্ষত্রের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক বোঝেন কৃষক, কারন গ্রহ নক্ষত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জলবায়ুর অবস্থা তাঁকে জানতেই হয়। যারা নিজেদের ‘সভ্য’ বলে তারা কিভাবে দৈনন্দিন বেঁচে থাকে তার খবরই জানে না। খবর রাখেও  না।



বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের গ্রামের বিশেষ জাত আলোচনা সভায় নিয়ে এসেছিলেন। জাতগুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে ।


জীবের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে সূর্যের ভূমিকা নির্ধারক। সূর্য না থাকলে কোন জীবই বাঁচে না। আমাদের চুলা যেভাবে আমাদের খাদ্য উৎপাদন করে, গাছের চুলাও সেভাবে গাছের খাদ্য উৎপাদন করে, সবুজে সবুজে পৃথিবীকে ভরে দেয়। সেই সবুজ খেয়েই জীব জগত টিকে থাকে। প্রাণ ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে। বিজ্ঞানি যাকে ‘সালোক সংশ্লেষণ’ বলেন কৃষকের কাছে তা গাছের চুল্লি, যার দ্বারা সকল জীবের প্রাণ উৎপাদনের ব্যবস্থা গাছ করে থাকে। কৃষকের জ্ঞানকে কৃষকের মতো বুঝতে শিখলে জ্ঞানচর্চার একটি সদর দরোজা আমরা পেয়ে যাই। নয়াকৃষি সেই জ্ঞানেরই সাধনা করে।

আমাদের পুর্বপুরুষেরা ১৫০০০ প্রজাতির ধান আবিষ্কার করেছে, তারা কি জানত না এখনকার আধুনিক ধানের জাতে মতো বামন ধানে অধিক ফসল হয়? তারা অবশ্যই জানত। লম্বা বাড়ে না, এমন ধানও তাদের রয়েছে। অধিক ফলন হয় তার সংখ্যাও অনেক। তবে কেন তারা বড় গাছের ধান চাষ করত? কারণ, বামন ধান শুধু মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে পারে, কিন্তু গরুর খড়, মাটির পুষ্টির জন্য সার, অন্যন্য প্রাণীর জন্য খাদ্য তৈরি ইত্যাদি উৎপাদন করতে পারে না। যেসব ধানের জাতে অধিক খড় হয়, কৃষক সজ্ঞানে সেই জাতগুলোকে পছন্দ করেছে। কারন তাকে তার গবাদিপশু হাঁসমুর্গি মাছমাছালির খদ্যের কথা ভাবতে হয়েছে। এমনকি জমির জন্য জৈবসারের কথা ভাবতে হয়েছে। ফলে যে ধান লম্বা হয়, বামন না, কিন্তু অধিক খড় দেয়, সেই জাত কৃষক হাজার বছর ধরে চাষ করেছে, তাদের জাত সংরক্ষণ করেছে। অথচ আধুনিক কৃষি এসে তার বদলে প্রবর্তন করল তথাকথিত ‘উফশী’ বা ‘বামন’ ধান। এই ধানের খড় গরু খেতে চায় না। এর ফলে গবাদি পশ, পাখপাখালি ও মাছের খাদ্যাভাব ঘটে, মাটি উর্বর রাখার জন্য জৈব সারের প্রয়োজন মেটে না। তদুপরি সার ও বিষ ব্যবহারে মাছ, গরুছাগল ও পাখপাখালির মরে।

কৃষি মানে এই নয় যে, আমরা শুধু মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করবো। বরং কৃষি মানেই সমগ্র সৃষ্টি জগৎ সংরক্ষণ করা। সৃষ্টির উৎপাদন ও পুনুরুৎপাদন নিশ্চিত করা। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এমন চাষাবাদ প্রবর্ত্ন করছে যাতে অন্য কোন জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এমন বীজ ও কৃষি উপকরণের জন্য আমরা তাদের গোলাম হয়ে পড়ি। এটাই ঘটা করে চলছে। তারা কীটনাশক প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ করে মাটির অনুজীবকে ধ্বংশ করছে, সকল প্রকার অনাবাদী গাছ বিনাশ করছে। শুধু চাষাবাদের ফসল ছাড়া অন্য সকল ফসল মেরে ফেলছে। কারণ অন্য প্রাণির খাদ্য ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখা কোম্পানির মুনাফাকারী কারবারের মধ্যে পড়ে না। তাদের বিষাক্ত পণ্য পাপাখালি কীট পতঙ্গকে ধ্বংস করছে। অথচ পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ সব কিছু মিলেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে।

আমরা ছাগলের জাতও হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের দেশের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল আমাদের আবহাওয়ার সাথে খুবই মাননসই। এরা মাঠে চরিয়েই জীবন যাপন করতে পারে। এরজন্য আলাদাভাবে খাবার দিতে হয় না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল- বিদেশী জাতের ছাগল চাষের ফলে আমাদের দেশের ছাগলের জাতও আজ আমরা প্রায় হারিয়ে ফেলতে বসেছি।

আমরা চাষের সময় মনে রাখব কোন ধান লাগালে আমাদের গরু পালনে সুবিধা হবে, কোন ধান,  আমাদের জমির সারের চাহিদা মিটাবে, কোন গাছ লাগালে আমাদের ছাগল পালনে সুবিধা হবে, কোন ফসল চাষ করলে আমাদের হাঁস-মুরগি পালনে সুবিধা হবে। এই বিষয়গুলো আমরা বুঝতে পারলে আমাদের কৃষিতে দ্রুত উন্নতি কেউ রুখতে পারবে না।

সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হল দেশী বীজ সংরক্ষণ করা, দেশি বীজের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বীজ মানে শুধু ফসল বা গাছপালানা। আমরা ভাল জাতের স্বাস্থ্যবান ষাঁড়, ছাগলের পাঁঠা, মোরগসহ  সকল প্রকার বীজ সংরক্ষণ করব। তাহলে হানাদারী কোম্পানীগুলো আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না।

ভাবুন যে আমরা চাই বা না চাই একটা  যুদ্ধক্ষেত্রে এসে পড়েছি, আপনি আপনার এবং সকল প্রাণিকুলের জীবন রক্ষার জন্য মরণপণ লড়ছেন।আর এটাই নয়াকৃষি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *