উবিনীগ || Sunday 20 August 2017
দাইঘরের তথ্যঃ ১৮ আগস্ট, ২০১৭
চিলমারী কুড়িগ্রামঃ চিলমারী মনতোলা ও কড়াই বরিশাল চরে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। কড়াই বরিশাল দাইঘরের দাইমা মর্জিনা বেগম ও সাহেরা বেগমের সাথে কথা বলে জানান কড়াই বরিশাল দাইঘরে আধা হাটু পানি উঠেছিল। এখন বন্যার পানি বারান্দায় নেমেছে। রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় দাইমারা দাইঘরে আসতে পারছে্ন না। এ মাসে ২ জন গর্ভবতী মায়ের বাচ্চা প্রসব হয়েছে হাসপাতালে, ২ টি বাচ্চাই সিজার করে হয়েছে। ১৭ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে গর্ভবতী মা জিয়াসমিনের প্রসব ব্যথা শুরু হরে তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সদর হাসপাতালে সিজার করে ছেলে সন্তান হয়েছে। তাকে নৌকায় করে নদী পাড় হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাথে ছিলেন দাইমা সাহেরা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা। ১৫ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে গর্ভবতী মা নাজমা খাতুনকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে তার সিজার করে মেয়ে হয়েছে। দাইমা ছিলেন মর্জিনা বেগম। বন্যার কারণে দাইমারা নিয়মিত দাইঘরে গিয়ে সেবা দিতে পারছেন না, তবে গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত দেখাশুনা করছে।
টাঙ্গাইলঃ বাসাইল দাইঘরের কাছে পানির তীব্র স্রোত থাকায় মাটি সরে গেছে। এখন ঘরের ডোয়া পর্যন্ত পানি রয়েছে। ২/১দিন এরকম পানির স্রোত থাকলে দাইঘর ঝুঁকির মুখে পড়বে। গ্রামের চারদিকে পানি থাকায় দাইঘরে দাইরা আসতে পারছেন না ফলে দাইঘরের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। তবে গর্ভবতী মায়েদের দাইমায়েরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন।
কুষ্টিয়াঃ বন্যার সময়ে কুষ্টিয়া জেলার ৫টি দাইঘরে মোট ২৫ টি শিশুর জন্ম হয়েছে। ছেলে ১৩ জন মেয়ে ১২ জন। এর মধ্যে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ১৮ টি, সিজার হয়েছে ৭ টি।
বেলগাছি দাইঘরের সাথে জড়িত ৫ জন গর্ভবতী মায়েদের শিশুর জন্ম হয়েছে স্বাভাবিক ভাবে। এরমধ্যে ২ টি ছেলে ৩টি মেয়ে। বড়বাড়িয়া দাইঘর ৩টি শিশুর জন্ম হয়েছে, ২টি ছেলে ১ টি মেয়ে। ২ টি সিজার ১টি নরমাল। নন্দলালপুর দাইঘর ৭ টি শিশুর জন্ম হয়েছে। ৪টি ছেলে ৩ টি মেয়ে। ২ টি সিজার ৫ টি নরমাল। মটপাড়া দাইঘর ৭ টি শিশুর জন্ম হয়েছে। ৩ টি ছেলে ৪ টি মেয়ে। ২ টি সিজার ৫টি নরমাল। ছাতিয়ান দাইঘর ৩ টি শিশুর জন্ম হয়েছে। ২ টি ছেলে ১ টি মেয়ে। ১ টি সিজার ২ টি নরমাল।
এখানে ৫ টি দাইঘর অধীনে ২৩ টি গ্রামের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১০২ জন দাইমার সম্পুর্ণ পর্যবেক্ষণে থাকা ১০৭ জন গর্ভবতী মা নিয়মিত পরামর্শ সেবা নিয়ে আসছে। কিন্তু গত এক মাসের অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হওয়ার কারনে তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বর্তমান তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। বন্যার পানি বাড়ীতে না আসলেও অতিমাত্রায় বৃষ্টি হওয়ার কারনে প্রত্যেকের বাড়িতে কাঁদা পানি। ঘর থেকে বেরোনোই কষ্টকর। বেশীর ভাগ গর্ভবতী মায়েরা পা পিছলে পরে যাওয়ার ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। একারণে দাইঘর সেবা নিতে আসা মায়ের সংখ্যা অনেক কম।
শত বৃষ্টি কাঁদা হলেও দাইমায়েরা একজন গর্ভবতী মাকে নিজের সন্তানের মত আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। মায়েদের শারীরিক সমস্যার কথা শোনা মাত্রই দাইমারা বৃষ্টি, কাঁদা, পানি উপেক্ষা করে কেউ কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে আবার কেউবা ছাতা ছাড়াই ছুটে যাচ্ছে গর্ভবতী মায়ের বাড়িতে। গভীর রাত্রেও গর্ভবতীর বাড়িতে গিয়ে সেবা দিয়ে আসছে। রাস্তা ঘাটের পরিস্থিতি খারাপ দেখে দাইমারা নিজেরাই গর্ভবতী মায়ের বাড়ী গিয়ে প্রেসার মাপছে, পরামর্শ সেবা দিচ্ছে। প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে শোনা মাত্র রোগীর বাড়ীতে ছুটে গিয়ে ঘরের মেঝে স্যাঁতস্যাতে থাকলে তারা চকিতে শোয়ায়ে ডেলিভারির কাছ করছে। কারো বাড়িতে চকি না থাকলে মেঝেতে পুরু করে বিছানা পেতে নিচ্ছে যাতে মা এবং বাচ্চার ঠান্ডা না লাগে।
দাই ঘর থেকে যাদের বিশেশ চিকিৎসা দরকার তাদের সরকারি হাস্পাতালে রেফার করা হয়, যে সব মায়েদের রেফার করা হয় তাদের নিয়ে আরো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বৃষ্টির কারনে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় মত ভ্যান অটো পাইতে অনেক সময় দেরী হচ্ছে। তাই তারা এ সময় যতটুকু বাড়ীতে রাখা যাবে তাও রাখছে না। আগে থেকেই গাড়ী খুঁজে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তবে হাসপাতালে নিতে গিয়ে আরেক সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভবতী মায়েরা এ সময় সাধারণত ভ্যান গাড়ীতে শুয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে কিন্তু ভ্যান গাড়ীতে নিতে গেলে ছাতা থাকলে ও জোরে বৃষ্টি পড়ার কারনে বৃষ্টির পানি ছিটে রোগীর শরীর এমন কি কাঁথা কাপড় ভিজে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে। আবার বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে অনেক মাকে অটো সি এন জি গাড়ীতে নিয়ে দেখা যাচ্ছে রোগী প্রসব বেদনায় ছটফট করছে একটু আরাম করে শোবে বা পা টান করে বসবে এত অল্প জায়গায় তাও পারছে না।
অতিবৃষ্টির কারনে গর্ভবতী ও প্রসূতি মা এবং শিশুদের যে সকল সমস্যা হচ্ছে তা হলোঃ
গর্ভবতী মা-শারীরিক সমস্যাঃ
(ক) ঘরের মধ্যে চেপে বসে থাকার কারনে কোমড়ে ঝিলিক, যন্ত্রণা, পেট শক্ত হয়ে যাওয়া এবং বাচ্চা নড়াচড়া কম করা।
(খ) ঠান্ডা ও কাশি।
(গ) আমাশয়, পেটফাঁপা, পাতলা পায়খানা।
(ঘ) হাটাহাটি করতে পারছে না যার জন্য বসে থাকতে থাকতে পা এমনিতেই ফুলে যাচ্ছে।
(ঙ) বৃষ্টির পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমে মায়েদের শরীরে অস্থিরতার ভাব বেশী লাগছে।
(ছ) খাবারে অরুচি ও বমি বমি ভাব।
খাওয়া দাওয়ার সমস্যাঃ
(ক) গরীব মায়েরা ঠিক মত তিন বেলা খেতেও পারছে না বিশেষ করে যাদের স্বামী ভ্যান বা রিক্সা চালক বা দিন হাজিরার কাজ করে তারা বৃষ্টির কারনে কাজ করতে পারছে না ফলে টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছে না।
(খ) বৃষ্টি কাঁদার কারনে বাড়ীর আশ পাশের কুড়ানো শাকসবজি তুলতে পারছে না।
(গ) বাড়ির পাশের জমি (পালানের) চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ডাটা, পেঁপে, কলাগাছ, লালশাক, ঝিংগা, ধুন্দল ইত্যাদি গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় পরিমান শাকসবজি খেতে পারছে না।
নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যাঃ নবজাতক শিশুদের ঠান্ডা ও নিউমোনিয়া হচ্ছে।
অতি ঠান্ডায় পেটে সমস্যা হচ্ছে।
প্রসুতি মায়েদের সমস্যাঃ প্রসূতি মায়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়ার কারনে তাদের নিজেদের এবং বাচ্চার কাপড় ঠিকমত শুকাতে পারছে না। ফলে যাদের এ্যাজমা আছে তাদের সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। ঠান্ডার সমস্যা বেশী হচ্ছে। গরীব মায়েরা টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় খাবার ও খেতে পারছে না। শত সমস্যার মধ্যেও দাইমায়েরা মা এবং শিশুদের বাঁচানোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।