ফরিদা আখতার || Thursday 07 April 2016
ডায়াবেটিস কোনো অপরিচিত রোগ নয়। চা পরিবেশন করতে গেলেই টের পাওয়া যায় কার ডায়াবেটিস আছে আর কার নেই। আজকাল জিজ্ঞেস করার নিয়ম হয়েছে, ‘চিনি দেব?’ রাজধানী শহর ঢাকায় সকালে রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, মধ্য ও উচ্চবিত্তদের আবাসিক এলাকা যেমন— গুলশান, ধানমন্ডির ফুটপাতে হন হন করে হাঁটতে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষকে। একেবারে যারা তরুণ, তাদের দেখা না গেলেও চল্লিশোর্ধ্ব অনেককেই এভাবে হাঁটতে হয় চিকিত্সকের প্রেসক্রিপশনে। এটা শহরের চিত্র, কারণ এ রোগ নিয়ে আলোচনা বা চিকিত্সা প্রথম শহর থেকেই শুরু হয়েছে। এ ধরনের রোগকে আমরা শহুরে ও বিত্তবানদের রোগ বলেই এতকাল জেনেছি। গ্রামে কি তাহলে ডায়াবেটিস নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু তা জানা যাচ্ছে না সময়মতো। নির্ণয় করাই হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৬ সালে রোগটি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছে এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, অর্থাত্ ৭ এপ্রিলের প্রতিপাদ্য এই নীরব ঘাতক অসংক্রামক রোগ ডায়াবেটিস ঠেকানো। ইংরেজিতে বলা হচ্ছে— Beat Diabetes. ডায়াবেটিস ঘাতক রোগ হলেও প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিত্সা ও জীবনযাপনের নিয়মবদলের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। ঠেকানো অবশ্যই সম্ভব। এবং সেই কাজ করার সময় হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৩ সালের হিসাবে প্রায় ৩৮ কোটি ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং ৫৩ লাখ মারা যাচ্ছে বছরে, যার ৮০ শতাংশ এখন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে রয়েছে (http://www.idf.org/sites/default/files/ EN^6E^Atlas^Full^0.pdf।) তাহলে ধনী ও উচ্চবিত্তদের রোগ মনে করা হলেও এটি ছড়াচ্ছে উন্নয়নশীল দেশে, যে দেশগুলো এখন উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নানাভাবে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের সঙ্গে যদি রোগ যুক্ত হয়ে যায়, তাহলে দুশ্চিন্তার বিষয়। দক্ষিণ এশিয়ায় এ রোগ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যা মোকাবেলা করার মতো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। বাংলাদেশে প্রায় ৫১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এ রোগে ভুগছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ এই নয় যে, এর বাইরে ডায়াবেটিস রোগী নেই। এ পরিসংখ্যান শুধু এতটুকু বলছে, যারা কোনো না কোনোভাবে হাসপাতালে এসে রোগ শনাক্ত করতে পেরেছে, তাদের ডায়াবেটিস আছে কিনা। উন্নত স্বাস্থ্য নির্ণয় ব্যবস্থা থাকলে প্রকৃত পরিসংখ্যান জানা যেত।
এ লেখায় চিকিত্সকের ভাষায় কথা বলার সাধ্য আমার নেই। তবুও সাধারণ জানার বিষয়গুলো তুলে ধরছি। সাধারণভাবে ডায়াবেটিস কী সবাই জানেন, এটি মূলত ব্লাড সুগারের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে হয়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির গাইড বইয়ে ডায়াবেটিস কী যেভাবে লেখা হয়েছে, তা পাঠকের জন্য নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা হতে পারে। আমরা যেসব খাদ্য গ্রহণ করি, তার শর্করা জাতীয় অংশ পরিপাকের পরে সিংহভাগ গ্লুকোজ হিসেবে রক্তে প্রবেশ করে। আর দেহকোষগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি উত্পাদনের জন্য গ্লুকোজ গ্রহণ করে। অধিকাংশ দেহকোষই এ গ্লুকোজ গ্রহণের জন্য ইনসুলিন নামক এক প্রকার হরমোনের ওপর নির্ভরশীল। ডায়াবেটিস হলো ইনসুলিনের সমস্যাজনিত রোগ। ইনসুলিন কম বা অকার্যকর হওয়ার জন্য কোষে গ্লুকোজের ঘাটতি এবং রক্তে গ্লুকোজের বাড়তি হয়— এই সামগ্রিক অবস্থাই হচ্ছে ডায়াবেটিস মেলাইটাস। কারো রক্তে গ্লুকোজ সুনির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলেই তাকে ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ডায়াবেটিসের ধরন অনুযায়ী এ বিষয়ে চিকিত্সা ও সচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপার আছে। দুই ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। একটি হচ্ছে টাইপ ১, ইনসুলিন নির্ভরশীল পর্যায়। এ ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সে (গড় বয়স ১০-১২ বছর) এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। বেঁচে থাকার জন্য এসব রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতেই হয়। সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে ইনসুলিন নির্ভরশীল টাইপ ১ রোগীর সংখ্যা খুবই কম। অন্যদিকে টাইপ ২-এর রোগীর শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়, তবে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় অথবা শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কম। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, এ কারণে শরীরে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন— কিডনি, দৃষ্টিশক্তি ও স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
এ দুটো ছাড়াও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়েও ভাবনার বিষয় আছে। এ ধরনের ডায়াবেটিস গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ধরা পড়ে, কিন্তু প্রসবের পর থাকে না। এ অবস্থা প্রসূতি মায়ের জন্য এক প্রকার জটিলতা বা ঝুঁকি, যা গর্ভবতী, ভ্রূণ প্রসূতি ও সদ্য-প্রসূত শিশু সবার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। বিপদ এড়ানোর জন্য গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস প্রয়োজনে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা অবশ্যক। গর্ভবতী মহিলাদের বিষয়ে যেসব ঝুঁকির কথা বলা হয়, তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। কিন্তু এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতা আছে বলে মনে হয় না।
জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় (http://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0118365) বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের (৯.২%) ডায়াবেটিস রয়েছে। যদিও International Diabetes Federation (IDF)-এর ২০১৩ সালের গবেষণায় দেখানো হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু তারা সতর্ক করে বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিস ১৩ শতাংশ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এখনো বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য কোনো গবেষণা হয়নি এ বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান দেয়ার মতো। পরিসংখ্যান যা-ই হোক, অসংক্রামক রোগের মধ্যে ডায়াবেটিস একটি অন্যতম প্রধান ঘাতক রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যা একই সঙ্গে প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিত্সা করে ভালো হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাজেই এ রোগ আরো বেড়ে যাওয়ার আগেই সচেতনতা সৃষ্টি করে সময়মতো ব্যবস্থা নিলে দেশে লাখ লাখ মানুষ বাঁচতে পারে। সুস্থ থাকতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা নির্ণয় না করলে জানা যায় না; কিন্তু এই না জানা অবস্থায় এক পর্যায়ে গিয়ে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৪১ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী নিজেদের অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে জানে, অর্থাত্ অর্ধেকেরও কম রোগী এ বিষয়ে অবগত, তার চেয়েও কম রোগী ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ চিকিত্সা নিয়েছে এবং ১৪ দশমিক ২ শতাংশ নিজেদের উদ্যোগে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
ডায়াবেটিস ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, এমনকি তরুণ ও শিশুদেরও হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথেষ্টভাবে রোগ নির্ণয় ও তার চিকিত্সাসেবা দেয়ার মতো অবস্থায় নেই। সরকারের নিজস্ব পরিকল্পনায় শহরের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে উন্নয়নশীল দেশে এ রোগ মহামারী আকারে ছড়াতে পারে এবং প্রতিবন্ধিতা, অকালমৃত্যু ও দারিদ্র্যের কারণ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ১২ শতাংশ পরিবারকে ধারদেনা করে অথবা বাড়ির কোনো সম্পদ বিক্রি করে ডায়াবেটিস চিকিত্সা করতে হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ডায়াবেটিসের মতো রোগ শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এ কারণে পরিবারে আর্থিক অসচ্ছলতাও সৃষ্টি হয়। (http:// dx.doi.org/ 10.2471/ BLT.12.115428 pmid: ২৪০৫২৬৮২।)
ডায়াবেটিস ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগকে উন্নয়নবাহিত রোগ বলা যায়। আমরা পানিবাহিত রোগ, জীবাণুবাহিত রোগ, খাদ্যবাহিত রোগ নিয়ে তত্পর থাকি, কিন্তু নগরায়ণ, খাদ্য ও জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন, যার সঙ্গে উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, তার কারণে যেসব রোগ হচ্ছে, এর মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যখন আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা বদলে যায়, শহরে খাদ্যের মধ্যে চিনির ব্যবহার অতিমাত্রায় হতে থাকে এবং নানা ধরনের কৃত্রিম ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো খাবার দোকানে অন্যান্য পণ্যের মতো শোভা বাড়ায়, তখন আমরা মোটেও চিন্তা করি না যে এই খাদ্য স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটায়। অতি চিনি মেশানো ড্রিংকস বা পানীয়, ফাস্টফুড ইত্যাদি স্থূলকায় হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি করছে। শিশুদের মধ্যে স্থূলকায় হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। একদিকে শিশুরা অপুষ্টির কারণে খর্বকায় হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে অনেক শিশু অস্বাভাবিকভাবে মুটিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ডায়াবেটিসও অনেক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। নগরায়ণের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, খেলাধুলার জায়গা কমিয়ে দিয়ে বড় বড় রাস্তা ও দালানকোঠা বানানো হয়। আমরা তা দেখে মুগ্ধ হই। কিন্তু এ কারণে শিশুরা খেলাধুলার জায়গা হারাচ্ছে, যার কারণে তারা ঘরে বসে কম্পিউটারেই ফুটবল বা ক্রিকেট খেলছে, তাতে শরীরে কোনো নড়াচড়া হচ্ছে না। ডায়াবেটিস শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণেও ঘটে। উন্নয়নের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, জীবনযাপনে সুবিধা যত সৃষ্টি করে, তার সঙ্গে সৃষ্টি করে মানসিক চাপ। প্রতিযোগিতামূলক জীবনযাত্রার কারণে মানসিক চাপ ও অতি দুশ্চিন্তা, ঘুমাতে না পারাও ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। আমার মনে হচ্ছে, ঢাকা শহরের যানজট যত দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে, তার কারণেও অনেকেই এ রোগের শিকার হতে পারেন বলে শুনলে অবাক হব না। অর্থাত্ বড় শহরের যানজটও ডায়াবেটিসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
কৃষি উত্পাদনে ধান উত্পাদন বেড়েছে, বিশেষ করে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ এখন বিপুল পরিমাণে উত্পাদন হয়। দেশে বর্তমানে ৩ দশমিক ৫ কোটি টন ধান উত্পাদন হয়, তার ৫৬ শতাংশ হচ্ছে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯।
শহরে ও গ্রামে মানুষের চালের তালিকায় এ দুটি খুব বেশি ব্যবহার হয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এ দুটি ধানে উচ্চমাত্রায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) পাওয়া গেছে, যা ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, অর্থাত ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা তৈরি করে। জিআই দ্বারা বোঝা যায়, কোন খাদ্য কত দ্রুতভাবে শর্করা অংশ পরিপাকের পরে গ্লুকোজ হিসেবে রক্তে প্রবেশ করে। এ নির্ধারক অনুযায়ী জিআই ৫০-এর কম হলে সহনশীল মাত্রা বলে ধরে নেয়া হয়, কিন্তু এ গবেষণায় ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯-এ ৭০ দশমিক ৫ ও ৭৬ দশমিক ৩ জিআই পাওয়া গেছে, যা মাত্রানুযায়ী বেশি। সাধারণত চালের মধ্যে জিআই বেশি থাকে কিন্তু অন্তর্জাতিকভাবে ২৩৫ জাতের ধানের জিআই নিম্ন বা মাঝারি পর্যায়ে পাওয়া গেছে। যা তত ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাদা চাল ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে বলে গবেষকরা মনে করছেন। হার্বার্ডের এক গবেষক বলছেন, ডায়াবেটিস কমাতে হলে সকালে নাশতায় সাদা পাউরুটি বা সাদা রুটি, দুপুরে খাবারে সাদা চাল বাদ দিয়ে ব্রাউন রুটি ও লাল চালের ভাত খেলে অন্তত ৪২ শতাংশ ডায়াবেটিস কমতে পারে। (http://www.observerbd.com/2016/01/18/131696.php) গ্রামের মানুষের এবং বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে বলে যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তার কারণ এ চালের ভাতও হতে পারে। এ বিষয়ে আরো গবেষণা হতে পারে। তবে হার্বার্ডের গবেষণা সম্পর্কে জানার পর এ ধান উত্পাদন কমানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানা যায়নি।
রাইস মিলের চাল খাওয়া বা চাল চকচকে সাদা করে পাতে তুলে দেয়া ভয়ানক ক্ষতিকর কাজ। আমাদের মধ্যে সাদাপ্রীতি এমন যে, নিজেদের চেহারা সাদা করার জন্য ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ক্রিম মাখি আর অন্যদিকে পাতের ভাতটিও সাদা না হলে খেতে ভালো লাগে না। ডায়াবেটিস হয়েছে তো কী হয়েছে, এটা তো বড় লোকের অসুখ। এ রোগ না হলে নিজেদের সামাজিক অবস্থান উঠবে কী করে?
সবচেয়ে বেশি উত্পাদিত ও ব্যবহূত ধানের মধ্যে যদি ডায়াবেটিসের হুমকি থাকে, তাহলে এ বিষয় নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কেও ভাবতে হবে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে খাদ্য একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, কাজের ধরন বদলানো কঠিন কিছু নয়। তাই একদিকে ডায়াবেটিস শনাক্ত করার জন্য যেমন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করতে হবে, অন্যদিকে কৃষি উত্পাদন, নগরায়ণ পরিকল্পনায়ও ডায়াবেটিসের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
এ রোগটি উন্নয়নবাহিত, উন্নয়ন আমরা অবশ্যই করব কিন্তু তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ডায়াবেটিসের মতো রোগ মেনে নেব না।
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রত্রিকা (বণিক বার্তা) ৭ এপ্রিল ২০১৬; দেখুন: ‘উন্নয়নবাহিত’ রোগ ডায়াবেটিস ও আমাদের কৃষি