বাংলাদেশের অবহেলিত ফল খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ লবনের অমূল্য ভান্ডার

ড. এম.এ সোবহান || Monday 15 September 2014

বাংলাদেশ প্রকৃতির লীলাভূমি। বার মাসে ছয় ঋতু। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে গাছ পালা তরু লতা ফুলে ফলে নতুন সাজে সজ্জিত হয়। শাক সবজি, ফলমূল, আবাদি ও অনাবাদি পরিবেশে বেড়ে উঠে। পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষকরাও নানান জাতের ফসলের আবাদ করেন। পরিবেশে প্রকৃতির এ সজিবতায় শুধু ফসল চক্রই নয় পশু পাখি, জীব অনুজীব এমন কি জড় প্রকৃতিও যেন নতুন সাজ ফিরে পায়। একে অন্যকে আলিঙ্গন করে। আপন করে নেয়।

আদিম মানুষ বন্য পরিবেশ থেকে যখন স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে তখন তাদের প্রথম পছন্দ ছিল ফল। ফল মানব জাতির জন্য প্রকৃতির অমূল্য উপহার। গ্রাম বাংলায় প্রচলিত আছে“জৈষ্ঠ মাস মধু মাস”। অর্থাৎ গ্রীষ্ম কাল ফলের মৌসুম। সত্য কথা, বাংলাদেশে যে সব আবাদি ফল পাওয়া যায় তার প্রায় ৬০% বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসেই পাওয়া যায়। এ সময় আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি সহ আরো অনেক ফল পাওয়া যায়। আর বাকি ৪০% ফল পাওয়া যায় ৮ মাসে। তখন ফলের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম।



বাংলাদেশের বর্তমান ফলের উৎপাদন ৪.৫ মিলিয়ন টন (বিবিএস – ২০১১)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১১৫ গ্রাম ফলের প্রয়োজন। বাংলাদেশে মাথা পিছু দৈনিক গড় সরবরাহ মাত্র ৭৭ গ্রাম। অর্থাৎ মাথা পিছু দৈনিক ৩৮ গ্রাম কম।

বাংলাদেশের অবহেলিত ফলের তালিকা (তালিকা-১) থেকে দেখা যায় যে কম পক্ষে ৪০ টি কম ব্যবহৃত ফল রয়েছে যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময় পাওয়া যায়। এ সব ফল স্থানীয় ভাবে হয় এবং বেশীর ভাগই স্থানীয় ভাবে ব্যবহার করা হয়। এ সব ফলের গাছ রোগ বালাই ও পরিবেশ প্রতিকুলতা সহনশীল। সহজেই আবাদ করা যায়। এ সব ফলের আবাদ খাদ্য সার্বেভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র দূরীকরনেও সহায়তা হতে পারে। তাছাড়া এসব ফলের মধ্যে আছে খাদ্য প্রাণ, খনিজ লবন এবং আঁশ যা মানুষের বহুবিধ রোগ যেমন ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, রাতকানা প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে এবং রোগ নিরাময় সহায়তা করে। কম চর্বি, কম ক্যালোরী এবং এন্টিঅকসিডেন্ট থাকার ফলে এসব ফল মানব দেহের কোষ, টিসু এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সজিব রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে পারে।


Food List
Food List
Food List

তথ্য সূত্র:

১. Institute of Nutrition, IN, 2013. Food Composition Table for Bangladesh, Report of the Institute of Nutrition and Food Science, Center for Advanced Research in Science, University of Dhaka, P.178.

২. Rahman M, Jillur Rahman. 2014. Medicinal Value and Nutrient status of Indigenous Fruits in Bangladesh, Nova Journal of Medical and Biological Science 2 (6):1-19 (www.novaexplore.com).

ড. এম.এ সোবহান
কনসালট্যান্ট, উবিনীগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *