তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) || Sunday 27 May 2012
তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বাড়াও – তামাক বিরোধী নারী জোট
ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ও এর ক্ষতির শিকার শ্রমজীবী মানুষেরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশী। সার্বিকভাবে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নারীরা। এই অপূরণীয় ক্ষতি রোধ করতে হলে অবিলম্বে আমাদের সচেতন কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। ধোঁয়াবিহীন যেমন-জর্দা, গুল, সাদাপাতা সহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্টিকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব এই আহ্বানে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য করণীয়’ শীর্ষক একটি জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করে।
২২ মে, ২০১২ সকাল ১০.০০টা থেকে বেলা ২.০০ টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) আয়োজিত ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন এনজিও, নারী সংগঠন, আইনজীবী, দেশের ৪০টি জেলা পর্যায়ের নারী প্রধান সংগঠন, ডাক্তার, শিক্ষক জেলা টাস্কর্ফোস সদস্য, ক্যাম্পেন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (CTFK) এর প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকবৃন্দ। প্রথম পর্বের সভাপ্রধান ছিলেন ফরিদা আখতার নির্বাহী পরিচালক নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা,, আহবায়ক তামাক বিরোধী নারী জোট(তাবিনাজ)।
কর্মশালায় উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়-এর মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এম পি, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. সামিনা চেীধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। মূল আলোচক ছিলেন, তাইফুর রহমান, এডভোকেসি এন্ড মিডিয়া কো-অরডিনেটর, ক্যাম্পেন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (ঈঞঋক)। সভাপ্রধান ছিলেন ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ও আহবায়ক, তামাক বিরোধী নারী জোট। উদ্বোধনী পর্বের প্রথমেই তামাক ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তাবিনাজের তৈরী পোষ্টার এবং ধোঁয়াবিহীন জর্দা, গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য মুক্ত এলাকা চিহ্ন যুক্ত সাইন বোর্ড টির মোরক উন্মোচন করেন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি।
প্রধান অতিথি মাননীয় মন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রথমেই জেলা পর্যায়ের তাবিনাজ নেটওয়ার্কের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তামাক, বিড়ি, সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব শুধু পুরুষ মধ্যে পড়ে এটা মনে করা হতো। আসলে দেখা যাচ্ছে নারী ও শিশুদের মধ্যে এর ক্ষতির প্রভাব সব চেয়ে বেশি। নারীরা সেবন করছে তারা হয়তো এর ক্ষতির প্রভাব সম্পর্কে জানে না। এটা নিয়ে তাবিনাজ যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে তার জন্য তাবিনাজ প্রসংশনীয়। তবে নারীরা কি রকম সারা দিচ্ছে সেটার ব্যপারেও (এ্যাসেসমেন্ট) দরকার রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ২০০৫ সালে তামাকের যে আইন ছিল সেখানে ধোঁয়াবিহীন তামাকের কথাটা ছিল না। এটাকে যুক্ত করে প্রস্তাবিত আইন হচ্ছে। বিড়ি কারখানায় নারী ও শিশুরা যে কাজ করছে নারী ও শিশুদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা কি করে করা যায় তার চিন্তা করা হচ্ছে। ৫ বছরের মধ্যে বাচ্চাদের মস্তিকের বিকাশ ঘটে এই সময়ে তামাকের কারণে তাদের ক্ষতি হলে সে বিষয়টাকে দেখতে হবে। শিশুদের এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনার জন্য নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্প গ্রহণ করছে। যে সব শিশুরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদের পূর্ণবাসনের চেষ্টা করবো।
এই ধোঁয়াবিহীন জর্দা, গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য মুক্ত এলাকা চিহ্ন যুক্ত সাইন বোর্ডটি বিভিন্ন এলাকায় ব্যবহার করা যাবে বলে তিনি মত দেন। শুধু ধূমপান নয় ধোঁয়াবিহীন তামাকও নারীদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে এবং ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাকের কথার উলে¬খ নাই, বলেন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে তামাক ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করা যেতে পারে বলে তিনি উলে¬খ করেন। তামাক দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কর বৃদ্ধির পক্ষে তিনি সম্মতি প্রদান করেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি করা হলে গরীব মানুষ তামাক ব্যবহার কম করবে বলে তিনি মত দেন। পৃথিবীতে তিনটি বড় কোম্পানী রয়েছে ব্যবসা করে তারা অনেক লাভবান। এই তিনটি কোম্পানী হচ্ছে।
১. অস্ত্র কোম্পানী ২. ওষুধ কোম্পানী ও ৩. তামাক কোম্পানী
বাংলাদেশে এখন ধুমপান বন্ধ করা নিয়ে অনেক আন্দোলন হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এখন ধুমপানের ক্ষতির দিক নিয়ে সবাইকে সচেতন করছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন অফিসকে ধুমপান মুক্ত করতে অনেক সময় লেগেছে । ১৯৭৭ সালে যখন আমি তাদের একটি বইয়ের সম্পাদক ছিলাম তখন থেকে ধুমপানের বিষয় নিয়ে বলছি। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন অফিসকে ধুমপান মুক্ত করতে সময় লেগেছে ১৮ বছর। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন ধুমপায়ীকে চাকরি দেয়া হয় না। বিভিন্ন সংগঠনে যদি ধুপপায়ীদের নিয়োগ না দেয় তা হলে কিছুটা হলেও ধুমপান বন্ধ করা যাবে। ধোঁয়াবিহীন ধুমপানে মুখে ঘা হয় ক্যান্সার হয়। পুরুষদের ধুমপানের কারণে নারীরা পরোক্ষ ধুমপানের স্বীকার হয়সব চেয়ে বেশি। বড় ক্ষতি হয় স্বাস্থ্য খাতে। সিগারেটের কারণে হাসপাতালের ব্যয় বাড়তে থাকে। সিগারেট, বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকের উপর চোখ বন্ধ করে ট্যাক্স বাড়ানো উচিত। সরকার আইন করে তার প্রয়োগ হয় কম। পরিবারকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে ধুমপান করা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবো না।
তাইফুর রহমান, এডভোকেসি এন্ড মিডিয়া কো-অরডিনেটর, ক্যাম্পেন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (CTFK): সরাসরি যারা ধূমপান করছে এবং যারা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার প্রত্যেকেরই ক্ষতি একই রকম। লাং ক্যান্সার শতকরা ৮০ ভাগ তামাক সেবনের ফল যা মৃত্যুর বড় কারণ। এই শতকের প্রথম দিকে প্রতি বছরে ৫০ লক্ষ মানুষ মারা যেত তামাকজনিত কারণে। আরও সামনে আগালে অর্থাৎ ২০৩০ সাল নাগাদ তামাকজনিত কারণে মানুষের মৃত্যুহার দাঁড়াবে ৮০ লক্ষে। এভাবে চলতে থাকলে এ শতকেই ১০০ কোটি মানুষ মারা যাবে তামাক জনিত কারণে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দলিল। এফসিটিসি বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিষয়ক চুক্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যেগে ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে এ চুক্তি গৃহীত হয়।
তামাক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সারা পৃথিবীতে একটি অস্ত্র আছে – ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)। পৃথিবীর ১৭৪টি দেশ এই কনভেনশনের সদস্য। বাংলাদেশে বিষয়টি সম্পর্কে দুনিয়াব্যপী একটি আন্দোলন আছে তাতে বলা হয় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে, তার মধ্যে ১ কোটি ৪০ লক্ষ নারী বিভিন্নভাবে তামাক বেশী ব্যবহার করছে। পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশে তামাক ব্যবহার কমছে কিন্তু বাংলাদেশে তা দেখা যাচ্ছে না। একটা গোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহার কম হলেও পারতপক্ষে দেখা যায় তামাকের ব্যবহার মোটেই কমছে না।বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৪ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ। এর মধ্যে ১ কোটি নারী। যদিও ৭ লক্ষ নারী সরাসরি ধূমপান করে কিন্তু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ১ কোটি নারী। এটাও নারীর প্রতি একটি বৈষম্য। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৮৩ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে তামাক সেবনের কারণে।ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫, সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এ রয়েছে –
১. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ।
২. পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান হ্রাসে গৃহিত পদক্ষেপ।
৩. ধূমপানমুক্ত স্থান বৃদ্ধি।
৪. তামাকজাত সামগ্রীর মোড়কে সতর্কবাণীর আওতা বৃদ্ধি।
৫. আইন মনিটরিং ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা।
৬. তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি।
৭. তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সরকারের ধারাবাহিক উদ্যোগ গ্রহণ।
৮. তামাক কোম্পানীর বেআইনী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ
৯ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল।
১০. অধূমপায়ীর অধিকার প্রতিষ্ঠা।
এই আইনে কতগুলো দূর্বলতা রয়েছে – যেমন ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য হিসাবে গণ্য হয় নি। আইনে বলা হয়েছে, শুধু ধূমপানের উপাদান যা ধোঁয়ার সৃষ্টি করে তাকে তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। আইনে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান হ্রাসে গৃহিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিন্তু বেসরকারী অফিস ও চিহ্নিত রেষ্টুরেন্টগুলোকে আইনের আওতায় আনা হয় নি। ধূমপান সেবনের স্থান (smoking zone) নির্ধারণ করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু এটা এফসিটিসি’র সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি’র আইন সংশোধনের অন্যতম বধ্যবাধকতা। এফসিটিসি ও গাইড লাইন অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এর কয়েকটি ধারা উন্ন্য়ন ও নতুন ধারা সংযোজনের প্রয়োজনের আলোকে সংশোধিত আইনটি কেবিনেটে পাঠান হয়েছিল কিন্তু সেটা বিভিন্ন কারণে আলোচিত হয় নি।
অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী স্ত্রী রোগ ও ধাত্রী বিদ্যা বিশেষজ্ঞ। নারী যখন তামাক শুকানোর কাজ করে, পোড়ানোর কাজ করে তখন তার শরীরে তামাকের প্রভাব পড়ে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের কারনে একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভের সন্তান বিকালাঙ্গ তৈরি করে। শিশুকে বাড়তে দেয় না। ঐ শিশু জন্ম নিলেও ভবিষৎতে তার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ধুমপানের কারণে হার্ট এট্যাক, স্ট্রোক এ ধরনের রোগ হয়। সিরাজগঞ্জে শ্রমিকরা ১০০ টাকার বিনিময়ে বিড়ি কারখানায় কাজ করে। ফলে শরীরে নানা ধরণের প্রভাব পড়ে। আগে উৎপাদন বন্ধ করতে হবে । কোন কারখানাই যেন তেরি না হয়। সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই তামাকের ওপর কর বাড়াতে হবে।
দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপ্রধান ছিলেন ড.মাহমুদা ইসলাম, উইমেন ফর উইমেন। প্রধান অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার (অব ঃ) আব্দুল মালিক। আলোচক ছিলেন ড. রহিমা খাতুন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট, সেগুফতা সুলতানা, প্রোজেক্ট কো-অডিনেটর, নাটাব, সৈয়দা অনন্যা রহমান এডভোকেসি অফিসার, ডাবি¬উবিবি ট্রাষ্ট এবং এড. হাবিবুন নেসা, সভানেত্রী নারীপক্ষ। সঞ্চালনা করেন শাহীনুর বেগম, তামাক বিরোধী নারী জোট।
ড. রহিমা খাতুন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট তামাকের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে তিনি। যে জমিতে পাটের চাষ করা হতো সেই জমিতে তামাক চাষ করে সেই জমির মাটি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। পাটের জমি তামাক দখল করে নিয়েছে। ৬-৭ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়। পাট একটি পরিবেশ সম্মত একটি ফসল। ফসলের বৈচিত্রে কোন প্রভাব পড়ে না। তামাক চাষের কারণে আমরা পুষ্টি হীনতায় ভুগছি। তামাকের চাষ বন্ধ করে ঐ জমিতে পাট চাষ করার আহবান জানান।
অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউ-েশন। তামাকের ভয়াবহতার ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ২৫ বছর বয়সের ওপরে ৪৩% পুরুষ প্রতিদিন তামাক ব্যবহার করে। সংখ্যায় দেখলে এর পরিমান ৪ কোটি ১৩ লক্ষ লোক প্রতিদিন আমাক ব্যবহার করে। মহিলাদের মধ্যে ২৭ ভাগ নারী তামাক ব্যবহার করে থাকে। সংখ্যায় দেড় কোটি নারী ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করছে। পশ্চিমা দেশে সিগারেটে স্বাস্থ্যের ক্ষতির উপর গবেষণা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে শরীরে এমন কোন অঙ্গ নাই। যা সিগারেটে ক্ষতি করে না।
হাবিবুন নেসা সভানেত্রী নারী পক্ষ। তামাকের ভয়াবহতার দিক নিয়ে তাবিনাজ দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। তারা এটাকে ঘরে রেখেছে। এজন্য তাবিনজ কে ধন্যবাদ জানান। রোগের কারণকে খুচিয়ে দেখা দরকার। তামাক অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তামাক আনার আগে সতর্ক থাকতে হবে। তামাকের ওপর ট্যাক্স অবশ্যই বাড়াতে হবে।
সৈয়দা অনন্যা রহমান, এডভোকেসি অফিসার ডাব্লিউ বিবি ট্রাস্ট। তামাক কোন খাদ্য নয় এটা উৎপাদন করে কৃষক কোন লাভবান হচ্ছে না। লাভবান হচ্ছে কোম্পানী। পলিসি মেকাররা বন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে। প্রতিবছরই তারা ঘজই এ চিঠি দিয়ে থাকে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন চাই। সরকারকেই করতে হবে। বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার আব্দুল মালিক । তামাকের কারণে যে সব ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হয় এর চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। গরীব মানুষের পক্ষে এই খরচ বহন করা খুব কষ্টকর । ট্যাক্স বাড়ালে গরীব মানুষ ধুমপান করবে না। যে টাকা উপার্জন করে তার বেশির ভাগ খরচ হয় রোগের পেছনে। প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। তামাকের উপর ট্যাক্স বাড়াতে হবে।
সেগুফপ্তা সুলতানা প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাটাব। যক্ষা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করে । তামাকের কারণে ফুসফুস দুর্বল হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার অত্যন্ত জরুরী। স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা টিফিনের পয়সা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে ধুমপান করে। কর বৃদ্ধি করতে হবে।
আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে তামাকজাত দ্রব্যের বিশেষ বিশেষ দিক তুলে ধরে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নারী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। প্রথমে বক্তব্য রাখেন নওগাঁ থেকে আগত আশ্রয় সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক, আলো দাস। সম্প্রতি টেলিভিশনের সংবাদে দেখান হয়েছে আসন্ন অর্থ বছরের বাজেট (২০১২-২০১৩) নিয়ে মাননীয় অর্থ মন্ত্রী আলোচনায় বসে ছিলেন। সেখানে অনেক জিনিষের উপর উচ্চহারে কর আরোপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তামাকের উপর কতটা কর বসান হলো এ বিষয়ে তিনি কোন রেখাপাত করেন নি। এতে কি ধরে নেয়া যায় যে তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি যুব সমাজকে তিনি উৎসাহিত করছেন? বাংলাদেশ দরিদ্র জনবসতি দেশ। শ্রমিকরাই বেশী বিড়ি এবং সিগারেট খায়। শুধু বিড়ি, সিগারেট নয়- জর্দা, গুল, সাদাপাতা অর্থাৎ ধোঁয়াবিহীনসহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর যদি কর বৃদ্ধি করা হয় তাহলে গরিব জনগণ তামাক সেবনে বিরত থাকবে কিন্তু সেদিকে আমরা ভ্রুক্ষেপ করছি না। স্কুল কলেজের সামনে ছোট ছোট টোং দোকানে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করা হয়। এ সব আইন করে বন্ধ করা উচিত। কর বৃদ্ধি ও বিড়ি কারখানাগুলো বন্ধ করার কথা বললেই বলা হয় এই শ্রমিকদের দায়িত্ব কি এনজিও’রা নিবে? সব কাজই যদি এনজিও’রা করে তাহলে সরকার কি করবেন-এভাবেই মত ব্যক্ত করেন আলো দাস।
বিড়ি-সিগারেট না খেয়েও আমরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছি অহরহ। বিড়ির ধোঁয়ায় চার হাজারেরও বেশী রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা মারাত্মক ক্ষতিকর। বাংলাদেশে নারীরা কর্মস্থলে, বাস টার্মিনালে, বিভিন্ন জায়গায় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। ধূমপান না করেও বাংলাদেশের এক কোটি নারী পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে গর্ভবতী মাদের অকাল গর্ভপাত, কম ওজনের শিশু, মৃত শিশু প্রসব হতে পারে। পাশাপাশি হাঁপানী, যক্ষ্মা, ফুসফুস ক্যান্সার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। যে নারী প্রতিদিন এক ঘন্টা ধূমপায়ীর সাথে থাকে তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকিটা বেশী-বলেন নাসরীন পারভীন, নির্বাহী পরিচালক, শুচিতা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, পাবনা।