নয়াকৃষি

লেখা পড়তে শিরোনাম বা ছবি ক্লিক করুন


নয়াকৃষি আন্দোলন

নয়াকৃষি  এক কথায় প্রাণের চর্চা — অর্থাৎ প্রাণের সুরক্ষা, বিবর্তন ও বিকাশের এক সামগ্রিক ও সপ্রাণ ব্যবস্থাপনা। এর লক্ষ্য আনন্দময় জীবনযাপন। জীবনকে তার সারবত্তাসহ অনুভব, উপলব্ধি ও উপভোগ। প্রাণের স্বাদ  কর্মে, জ্ঞানে, জীবনযাপনে পরাপুরি গ্রহণ ও নিরন্তর আনন্দিত থাকাই নয়াকৃষর সাধনা।

নয়াকৃষি কৃষকদের আন্দোলন। বিষ কোম্পানির প্ররোচনায় কৃষিতে বিষ ব্যবহার বন্ধ করে এবং পরিবেশ ও প্রাণের কোন ক্ষতি না করে চাষাবাদে কিভাবে করা যায় কৃষকদের সেই চেষ্টা থেকে নয়াকৃষি আন্দোলনের জন্ম।  যারা শুধু কৃষির ফলনে আগ্রহী তঁরা জেনে খুশি হবেন যে নয়াকৃষি চাষাবাদে কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও বিষ বা কীটনাশক ব্যবহার না করে এবং দেশীয় জাতের বীজ ব্যবহার করে একর প্রতি ফলন বৃদ্ধির পদ্ধতির নাম। নয়া কৃষি নয়াকৃষিতে ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে সেচের জন্য মাটির তলা থেকে পানি তোলা হয় না, বরং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও মাটির ওপরের পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নয়াকৃষিতে একাট্টা ফসল না করে মিশ্র ফসলের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। নয়াকৃষির কৃষকরা এই ধরণের দশটি নীতি অনুসরন ও চর্চা করেন। নয়াকৃষির পাতায় এই আন্দোলনের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

কিন্তু নয়াকৃষি শুধু মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করবার আন্দোলন নয়, সকল প্রাণ ও প্রাণীর খাদ্য নিশ্চিত করবার আন্দোলন। প্রাণের রক্ষা, বিবর্তন ও বিকাশের মধ্য দিয়েই সমৃদ্ধি, শান্তি ও আনন্দ লাভ সম্ভব — নয়াকৃষির কৃষকরা এই বিশ্বাসই আমল করবার চেষ্টা করে।

নয়াকৃষি চাষাবাদ পদ্ধতির মানে প্রাণ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কোন হানাদারি বা ক্ষতিকর কাজ সতর্কতার সঙ্গে পরিহার করা। চাষাবাদের অর্থ শুধু মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন নয়; বরং মানুষের খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে পশু, পাখি, কীটপতঙ্গসহ প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আহার জোগানো এবং তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। শুধু খাদ্যও নয়, নয়াকৃষি মশলা, ঔষধ, জ্বালানি, ঘর ও আসবাবপত্র নির্মাণ সামগ্রী, ঔষধ, সুতা – অর্থাৎ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের জন্য যা কিছু দরকার তার সবকিছুই উৎপন্ন করে।

নয়াকৃষি তার ভাবগত দিকের চর্চার জন্য নবপ্রাণ আন্দোলনের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে কাজ করে। বাংলার ভাবান্দোলনের ধারার অভ্যন্তর থেকেই নয়াকৃষির উৎপত্তি।

(আরো পড়ুন )


নয়াকৃষির দশ নীতি

নয়াকৃষির দশনীতি হচ্ছে পরিবেশসম্মত উন্নত জৈবকৃষি চর্চার দশটি নিয়ম, নয়াকৃষির বিধান অনুযায়ী চর্চা করলে এতে  জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ে, নিজের চাহিদা মিটিয়েও কৃষক বাজারে ভালো দামে বিনিময় করতে পারে, অথচ কৃষি, খাদ্য ব্যবস্থা এবং পরিবেশকে বিষ ও ক্ষতিকর পদার্থ থেকে মুক্ত রাখা যায়।

নয়াকৃষি সাধারণ ভাবে ‘অর্গানিক’ বা জৈব কৃষি হিসাবে পরিচিত হলেও এই পদ্ধতি আরও উন্নত। বিভিন্ন ফসল এবং প্রাণ ও প্রকৃতির বৈচিত্র রক্ষা এবং তার বিকাশ সাধন নয়াকৃষি চর্চার একটি প্রধান লক্ষ্য। এর ফলে মৌসুম, ফসলের জাত ও স্থানীয় পরিবেশ ভেদে ফসল উৎপাদন করা হয় বলে নয়াকৃষির উৎপাদন সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর।

নয়াকৃষিতে কৃষক নিজের খামার থেকেই জমির উর্বরতা রক্ষা ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জৈব সার ও অন্যন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ উৎপাদন করতে পারে। দশনীতি কৃষকদের অভিজ্ঞতারই সারমর্ম। দুই হাতের দশ আঙ্গুলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই অভিজ্ঞতা দশটি অনুসরণীয় বিধান হিসাবে সারসংক্ষেপ করা হয়েছে। দশনীতি কৃষকদের পক্ষে মনে রাখা সহজ। প্রতিবছরই নয়াকৃষির কৃষকেরা নিজেদের চর্চা ও নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে নীতি বা নিয়মগুলো নিয়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনা ও পর্যালোচনা করেন।

সর্বশেষ পর্যালোচনা হয় ২০১৪ সালে। এই পর্যায়ে নীতিগুলোকে দুটো পর্যায় বা ভাগে ভাগ করা হয়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় কৃষক সরল কৃষিব্যবস্থা থেকে আস্তে আস্তে আরও উন্নত বা তুলনামূলক ভাবে আরও আকর্ষণীয় প্রাণবৈচিত্রভিত্তিক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলছেন। প্রথম পাঁচটি নীতি এই দিক থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে সরল নিয়মে নয়াকৃষি চর্চা নিশ্চিত করে। এরপর কৃষক তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অনুযায়ী বাকি আরও পাঁচটির চর্চা বাড়িয়ে তুলনামূলক ভাবে উন্নত কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

(আরো পড়ুন )


নয়াকৃষি বীজসংঘ

নয়াকৃষি বীজ সংঘ হচ্ছে নয়াকৃষি আন্দোলনের সক্রিয় ও উদ্যোমী কৃষকদের নিয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্ক। ইংরেজিতে নয়াকৃষি বীজ সংঘকে Nayakrishi Seed Network (NSN) বলা হয়।

দেশীয় বীজ সংগ্রহ, রক্ষা ও পুনরুৎপাদন নয়াকৃষির কর্মতৎপরতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই কাজ সুষ্ঠ ভাবে সম্পাদন করবার জন্যই স্থানীয় জাতের বীজ সম্পর্কে অভিজ্ঞ কৃষকদের নিয়ে নয়াকৃষি বীজ সংঘ গঠিত হয়েছে। নয়াকৃষি বীজ সংঘের সুনির্দিষ্ট কাজ হচ্ছে কৃষকের ঘরে বীজ রক্ষা করা এবং কোন ভাবেই যেন তা হাতছাড়া বা হয়। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে কৃষকের মধ্যে ঐতিহ্যগত ভাবে প্রচলিত বীজ বিনিময় ব্যবস্থা সক্রিয় রাখা যেন কোম্পানি বা বাজারের কাছ থেক কৃষককে বীজ কিনতে না হয়। তৃতীয় কাজ হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষি উৎপাদন চর্চার জন্য বিভিন্ন জাত ও প্রজাতির বীজ কৃষকদের জন্য মজুদ রাখা এবং বিতরণ করা। সামগ্রিক ভাবে নয়াকৃষি আন্দোলনের সাংগঠনিক কার্যক্রম — যেমন-বীজ ও প্রাণসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং নয়াকৃষি কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ, বীজসম্পদের বিকাশ ও বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজে নয়াকৃষি বীজ সংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমকা রাখে।  নয়াকৃষির কৃষকদের উদ্যোগে, কৃষকদের নিয়ে গঠিত ‘নয়াকৃষি বীজ সংঘের সদস্যগণ সামাজিক পর্যায়ে কৃষকের ক্ষেতে (in-situ) এবং ঘরে (ex-situ) বীজ ও প্রাণসম্পদ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রধানশক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নয়াকৃষির কৃষকরা ক্ষেতে যেমন প্রাণসম্পদ সংরক্ষণ করে ঠিক তেমনি ঘরেও বীজ সংরক্ষণ করেন। নয়াকৃষি বীজ সংঘের কাজ তিনটি ধাপে যেমন-কৃষকের বীজ ঘর, বীজ আখড়া এবং সামাজিক বীজ সম্পদ কেন্দ্রের মধ্যে বিন্যস্ত। নয়াকৃষি বীজ সংঘের নেতৃত্বে নয়াকৃষি আন্দোলনের বীজ ব্যবস্থাপনা কৃষক পর্যায়ে গ্রামে গড়ে উঠেছে। নয়াকৃষি বীজ সংঘের কাজে নয়াকৃষির নারীকৃষক সদস্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং তারা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।

(আরো পড়ুন )


নয়াকৃষি প্রাণসম্পদ ব্যবস্থাপনা

প্রাণসম্পদ ব্যবস্থাপনা

(আরো পড়ুন )


নয়াকৃষির কৃষক

নয়াকৃষির কৃষক

(আরো পড়ুন )


নয়াকৃষি গ্রাম

নয়াকৃষি গ্রামের সকল ধরনের খবর এই পাতায় থাকবে

(আরো পড়ুন )